আইনের দুর্বলতার সুযোগে তামাক কোম্পানিগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি তৈরি করছে—এ মন্তব্য করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আরও শক্তিশালী করার জোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি (নাটাব) গাজীপুর জেলা শাখা। বুধবার গাজীপুরের একটি স্থানীয় পত্রিকা কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সে সংগঠনের সভাপতি ডাক্তার রুহুল ফুরকান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সেক্রেটারি সাংবাদিক বেলাল হোসেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নাটাব গাজীপুর জেলা শাখার প্রোগ্রাম অফিসার মোঃ শাহিনুর রহমান।অনুষ্ঠানে গাজীপুরে কর্মরত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় সভাপতির বক্তব্যে ডাঃ রুহুল ফুরকান সিদ্দিকী বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, আইন সচল রাখতে এবং সমাজকে সুরক্ষিত করতে প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা। তাঁর ভাষায়, আইনের চেয়ে বেশি জরুরি মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তামাকবিরোধী পরিবেশ তৈরি করতে সাংবাদিকরাই হলেন সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। আপনাদের কলমের শক্তি, আপনাদের লিখনির একসময় সব অনিয়মকে থামিয়ে দেবে, সমাজকে বদলে দেবে। তামাকের ভয়াবহতা তুলে ধরতে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—আপনাদের এগিয়ে আসতেই হবে।

তাঁর মতে, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে সচেতন করে তোলা গেলে তামাক-মুক্ত বাংলাদেশ গড়া আরও সহজ হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দেশে প্রায় পৌনে চার কোটি মানুষ তামাক ব্যবহার করে এবং প্রতিদিন ৪৪৪ জন মানুষ তামাকজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করছে, বছরে এই সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি। তরুণদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের বিস্তার, পরোক্ষ ধূমপানের উচ্চ হার এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকের সহজলভ্যতা এখন ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি করেছে।

যুব সমাজকে বাঁচাতে এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ করা জরুরি। তাদের মতে, ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্য প্রদর্শন বন্ধ করা, ই-সিগারেটসহ উদীয়মান তামাকজাত পণ্য আমদানি-উৎপাদন-ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, সিগারেট- বিড়ির খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা—এসব পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

বক্তারা বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যে এসব নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে তামাক নিয়ন্ত্রণে সাফল্য পেয়েছে। বাংলাদেশের লক্ষ্যও হওয়া উচিত তামাকমুক্ত প্রজন্ম নিশ্চিত করা। এজন্য তামাক শুল্কনীতি সহজীকরণ, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির জন্য বিশেষ তহবিল গঠন এবং আন্তর্জাতিক এফসিটিসি-সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন প্রণয়নের ওপর জোর দেন বক্তারা।

উপস্থিত বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে জানায়, সরকারের প্রেরিত সংশোধনী প্রস্তাব দ্রুত পাশ হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা আরও শক্তিশালী হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিও বাধাহীন হবে। সংগঠনের দাবি, এ বিষয়ে নীতি নির্ধারক থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সর্বস্তরের সমর্থন জরুরি।