গাজীপুরের লবলং নদী একসময় প্রবাহমান ছিল, জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন? প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য সরাসরি এই নদীতে ফেলা হচ্ছে! ১৩৫টিরও বেশি শিল্প কারখানা তরল বর্জ্য নদীতে ফেলছে, আর শহরের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে দেদারছে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক, পলিথিনসহ নানা অপচনশীল পদার্থ। ফলে লবলং নদী এখন এক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

শনিবার দুপুরে পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এই ভয়াবহ তথ্য উঠে আসে। মহানগরের বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মু. সোহরাব আলী।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন বাদল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মো. আবুল কালাম, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোতাছেম বিল্লাহ। এ ছাড়াও সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু ও নদী পরিব্রাজক দল গাজীপুরের সভাপতি মনির হোসেন মোল্লা। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মনিরুল হক ও মো. সাইফুল্লাহ এক বিশেষ প্রদর্শনীতে লবলং নদীর অতীত ও বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন। তাঁরা দেখান, দূষণের তীব্রতা, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, আইনি ব্যবস্থা ও উত্তরণের উপায়। এসময় মহানগরের কোনাবাড়ি এলাকার তুসুকা গার্মেন্টস ও ভোগড়া বাইপাস এলাকার স্কয়ার ফ্যাশন ইউনিট-২ তাদের ইটিপি (বর্জ্য পরিশোধন পদ্ধতি) ব্যবস্থাপনা নিয়ে পৃথক দুটি প্রদর্শনী উপস্থাপন করে।

সেমিনারে বক্তারা নদী রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। বিশেষজ্ঞদের মতে, কারখানার ইটিপি বাধ্যতামূলক করা, কঠোর নজরদারি, পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও আইন প্রয়োগ ছাড়া লবলং নদীকে বাঁচানো সম্ভব নয়।

নদীর এই করুণ দশা থেকে উত্তরণের জন্য প্রশাসন ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হবে? নাকি কেবল আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে? সেটাই এখন দেখার বিষয়!