বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেছেন, মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে হবে, এবাদত মনে করে মানুষের সমস্যা সমাধানে সবার আগে এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহর সাহায্য ও মানুষের ভালোবাসা পেলে বিজয় অবশ্যই আমাদের হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, ইসলাম ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনী কার্যক্রমকে সফল করতে প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে নেতা-কর্মীদেরকে ধৈর্য, শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উদগ্রীব। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্যে জনগণ প্রকৃত গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত হয়েছে। টেকসই গণতন্ত্রের জন্য স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য। তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী ইনসাফ, সততা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ সময় তিনি ‘জুলাই বিপ্লবের’ অধিকার আদায়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। নগরীর খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের বিআইডিসি সড়কে অবস্থিত শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা মহানগরী কার্যালয়ে খুলনা-৩ আসনের আসন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী থানার আংশিক) আসনের আসন পরিচালক আজিজুল ইসলাম ফারাজীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ইকবাল হোসেনের পরিচালনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য মুকাররম বিল্লাহ আনসারী, ব্যাবসায়ী থানা সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, খালিশপুর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন শেখ, দৌলতপুর থানা আমীর মোশারফ আনসারী, আড়ংঘাটা থানা আমীর মনোয়ার আনসারী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা মহানগরী সহ-সভাপতি এস এম মাহফুজুর রহমান, জামায়াত নেতা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মহিউদ্দিন, আজিজুর রহমান স্বপন, ইসমাইল হোসেন পারভেজ, শ্রমিক নেতা জাহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, ডা. সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, মোনতাজুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, কাজী বায়জিদ, আরিফ বিল্লাহ, আমিনুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন, রেজাউল কবির, আলাউদ্দিন শেখ প্রমুখ।

অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই পি আর (চৎড়ঢ়ড়ৎঃরড়হধষ জবঢ়ৎবংবহঃধঃরড়হ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করতে হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে কোনো দিনই জনগণের সঠিক মতামতের প্রতিফলন সম্ভব নয়, তাই পিআর পদ্ধতি ছাড়া আসন্ন নির্বাচনকে জনগণ নিরপেক্ষ বলে মেনে নেবে না। গতানুগতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশ ও জাতির জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না। স্বাধীনতা অর্জনের পর বিগত ৫৪ বছরের মধ্যে অনুষ্ঠিত অধিকাংশ নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত। এই নির্বাচনগুলোতে ছিল ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়ম, গণহারে ব্যালট পেপার ছিনতাই ও ভোট মারা, কেন্দ্র দখল, ডামি নির্বাচন, নিশি রাতের ভোট এবং ভোটারবিহীন নির্বাচন আয়োজন। সুতরাং দেশে একটি স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য এবং পক্ষপাতহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হলে আমাদের অবশ্যই এই কলঙ্কজনক অধ্যায় থেকে বেরিয়ে এসে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, আপনারা একদিন বলেছিলেন কেয়ারটেকারের সরকারের ফর্মুলা পাগল ও শিশুরা ছাড়া কেউ বোঝে না। অবশেষে আপনারা সেই কেয়ারটেকার সরকারের ফর্মুলা বুঝতে সামর্থ্য হয়েছিলেন। তিন তিনবার এদেশে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। আজও বিশ্বব্যাপী স্বাক্ষী অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার কারণে জনগণের আকাংখা পূরণ হয়েছিল। আর আজ আপনারা বলছেন আমরা পিআর পদ্ধতি বুঝি না। যারা পি আর পদ্ধতি বোঝেন না তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার দরকার নাই। আসলে আপনারা পিআর পদ্ধতি বোঝেননা, না বোঝার ভান করেন?

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পরে আপনারা জনগণের দূর্ভোগ দিয়েছেন, চাঁদাবাজি করেছেন, টেন্ডারবাজি করেছেন, পাথর লুট করেছেন, পাথর দিনে দিবালোকে মানুষকে হত্যা করেছেন। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য পিআর পদ্ধতি ছাড়াই নির্বাচন দিয়ে আপনারা ক্ষমতার সেই স্বাদ গ্রহণ করবেন। এটা হতে দেয়া হবে না। জুলাই বিপ্লবের অভ্যুত্থানের পর জনগণের আকাংখা পূরণ করার জন্য পিআর পদ্ধতির কোন বিকল্প নাই। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

মহানগরী আমীর অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা যে চেয়ারে বসে আছেন সে চেয়ারে এখনো শহীদের রক্ত লেগে আছে। শহীদের রক্তের সাথে আপনারা গাদ্দারি করবেন না তাহলে কিন্তু পরিণাম ভালো হবে না। অবিলম্বে সকল শহীদ ও আহত পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আহতদের সু চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সকল গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার করতে। আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টিসত ১৪ দল নিষিদ্ধ করতে হবে। জুলাই সনদের স্বীকৃতি প্রদান করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি এই গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কার না করে তড়িঘড়ি করে কোনো নির্বাচনের আয়োজন করা হয়, তবে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। জামায়াতে ইসলামী এই পদ্ধতির দাবিতে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।