DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

গ্রাম-গঞ্জ-শহর

জীবন যুদ্ধে সফল পাঁচবিবির পাঁচ নারী

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী: মোছাঃ হিরা খাতুন, পিতা-মোঃ আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, মাতা-মোছা বিলকিছ বেগম, গ্রাম-কোকতাড়া, পাঁচবিবি। সে ২০১০ সালে এস এস সি পাশ করে। এরপর কলেজ জীবনে খুব অর্থ সংকটে পড়েছেন।

উপজেলা সংবাদদাতা
Printed Edition
sdfs

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী: মোছাঃ হিরা খাতুন, পিতা-মোঃ আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, মাতা-মোছা বিলকিছ বেগম, গ্রাম-কোকতাড়া, পাঁচবিবি। সে ২০১০ সালে এস এস সি পাশ করে। এরপর কলেজ জীবনে খুব অর্থ সংকটে পড়েছেন। বিজ্ঞান বিষয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পূর্ণ করেছেন। পরবর্তীতে বগুড়া আজিজুল হক সরকারি কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞানে পিলিমিনারী টু মাষ্টার্স সম্পূর্ণ করেছে। তারপর চাকুরীর খোঁজে রাজধানী ঢাকা শহরে যায়। চাকুরী পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন টিউশনি চালাতে থাকেন এক পর্যায়ে একটা কর্পোরেট অফিসে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকুরি শুরু করেন। ২০২০ সালে ভয়াবহ করোনার কারণে অনান্যদের মতো তিনিও চাকুরী হারান। এর আগে ২০১৯ সালে নিজের ফেসবুক আইডি দিয়ে একটি বিজনেস পেইজ খুলেছিলেন। মাত্র তিন হাজার পাঁচশত টাকা দিয়ে বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনে ব্যবসা শুরু করেন। এখন তার ব্যবসায় বিনিয়োগ প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা। তার প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী স্থায়ীভাবে কাজ করছে ৬ জন, অস্থায়ীভাবে ১০ জন, সে একজন অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী।

শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী : কুমারী মুক্তি মিনজি, স্বামী-রিপন কুজুর, মাতা-শ্রীমতী জোসনা, গ্রাম-পাথরঘাটা, পাঁচবিবি। তার জন্ম ১৯৯৪ সালে প্রথমে সেন্ট পলস প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হন এরপর হাইস্কুলে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান শাখায় পড়ালেখা শুরু করেন, পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে কৃষি কাজ করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে পড়ালেখা চালাতেন। ২০১০ সালে এস এস সি তে ভালো রেজাল্ট করার পরেও টাকার অভাবে স্থানীয় কলেজেই ভর্তি হন। ২০১২ সালে এইচ এস সি পাশ করে পারিবারিকভাবে তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। স্বামী শিক্ষিত হলেও চাকুরি না করায় সংসারে অভাব লেগেই থাকতো এর মধ্যেই বি এস এস এ ভর্তি হয়। সে সময় একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। ডিগ্রি পাশ করে দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেলে পিলিমিনারি মাষ্টার্স পাশ করেন। এর পাশাপাশি টিউশনি চালাতে থাকেন মাষ্টার্স পাশের পর গ্রামের সেন্ট পলস জুনিয়র স্কুল পাথরঘাটা বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে চাকুরী করছেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে অনেক ভালো আছেন। সে এখন শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী।

সফল জননী নারী : অর্পনা রানী সরেন, পিতা- হাবেল সরেন, মাতা-আরতী সরেন, ঠিকানা-গাড়ো পাড়া, ধরঞ্জী, পাঁচবিবি। তার বাবার বাড়ী রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ১৪ নং চত্র ইউনিয়নের গাড়োপাড়া গ্রামে অবস্থিত। তার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক ছিল। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার গ্রামে মাটি কাটার কাজ করা সুজিত টুডুর সাথে তার পরিচয় হয়। দুইজনের ভাব বিনিময়, ভালোবাসা, পরবর্তীতে পরিবারের অসম্মতিতেই বিয়ে হয়। নানা কষ্টে তারা সংসার এগিয়ে নেয়। ক্ষুদ্র নৃ-গুষ্টি হওয়ার কারনেই তাদের সন্তানেরা যেনো সমাজে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্যেই তাদের পড়ালেখার খরচ সরবরাহ করেছেন অনেক কষ্টে। এখন অর্পনার বড় মেয়ে সিনভা টুডু স্নাতক শেষ করে মিশন স্কুলে চাকুরী করছেন। মেঝো মেয়ে শোভা টুডুকে স্নাতক সম্মান পাশ করে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে ছেলে শান্ত টুডু স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা দিবেন।

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী : মোছাঃ সাবিহা খানম, সে দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার ছাতনী গ্রামের মোঃ আব্দুর রউফ ও জাহানারা বেগমের পঞ্চম সন্তান, তারা দুইভাই তিনবোন ছিল। বাবা অত্যান্ত গরীব হওয়ায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পাঁচবিবি উপজেলার বিরঞ্জন গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে খালেদ হোসেন রনির সাথে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী নানা অছিলায় তাকে নির্যাতন করতে থাকে, এক পর্যায়ে ২য় বিবাহ করে। এর পরেও কষ্ট সয্য করে সংসার করা অবস্থায় তাকে তালাক দেয়। দুটি সন্তান নিয়ে সাবিহা দিশেহারা হয়ে পড়ে। কষ্ট করে ফ্রিলান্সিং এর কাজ শিখে এবং দর্জি প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতেই কাজ করতে থাকে। এখন সে শহরের বাসায় থাকে নিজের কষ্টের অর্জনের অর্থ দিয়ে ২টি সন্তানকে মাদরাসায় পড়ালেখা শেখাচ্ছেন। সে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন।

সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী : পারভীন খাতুন, পিতা-খবির উদ্দিন, মাতা-মোছাঃ দেলোয়ারা বেগম, জীবনপুর, পাঁচবিবি। ১নং বাগজানা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা। তার বাবা দিনাজপুর সদরের বাসিন্দা, পরিবার পরিকল্পনা অফিসের গাড়ি চালক ছিলেন তিনি। ২০০০ সালে জীবনপুর গ্রামে বিয়ে হয় পারভীনের। ২০০৪ সাল থেকে জাকস সংস্থার অধীনে হাইজিন এবং সেনিটেশন বিষয়ে এলাকায় কাজ করেন, এরপর ৮ বছর যাবৎ ওয়ার্ল্ড ভিশনের অধীনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, গণশিক্ষা, ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন, এলাকার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে প্রথমে ২০১৬ সালে এবং ২০২২ সালে ২য় বার সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা হিসেবে নির্বাচিত হন। এর পর থেকে সরকারী বিভিন্ন ভাতা ও অনুদান ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রাপ্য নিশ্চিত করে এবং বাল্য বিবাহ ও মাদক প্রতিরোধ, বিভিন্ন শালিশ নিষ্পত্তি, ইভটিজিং প্রতিরোধ, ভিজিডি-ভিজিএফ এর সুষ্ঠ বন্টন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে এগিয়ে আনার জন্য বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান সহ এলাকার মানুষের প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন তিনি। পারভীন এখন সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা নারী।