মহেশখালী (কক্সবাজার) সংবাদদাতা : মণপ্রতি লবণের দাম ২৫০ টাকা, অথচ উৎপাদন খরচই ৩৫০ টাকার বেশি। লবণ চাষীদের ঘরে নিরব কান্না। উৎপাদন খরচ উঠছেনা জীবন চলছে লোকসানের বোঝা টেনে। ধারদেনার টাকায় লবণের চাষ করে এখন প্রান্তিক লবণ চাষীরা। বাজারে লবণের দাম নেই, তাই মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকায় একেবারেই পরিমাপ বন্ধ। যে এলাকায় খুবই স্বল্প লবণ পরিমাপ করছে তার দাম নির্ধারণ হচ্ছে প্রতিমণে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। লবণের দাম না বাড়লে প্রান্তিক চাষীরা লবণ চাষে উৎসাহ হারানোর পাশাপাশি বড় লোকসানের মুখোমুখি হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কক্সবাজার জেলার মহেশখালী থেকে দেশের লবণের চাহিদার বড় একটি যোগান আসে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লবণের উৎপাদন বেশ ভালো বলতে হবে। কিন্তু তাতে কোন লাভ নেই লবণ চাষীদের। চাষীরা বলেছেন, মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের কারণে লবণ উৎপাদন করে মাথায় হাত তাদের। আগেও অনেকবার এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে লবণ চাষীদের। এ দূর্গতি থেকে তাদের মুক্তি নেই। চাষীরা বলেছেন, মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে পারলে লবণের ন্যায্য মূল্য পাবে লবণের প্রান্তিক চাষীরা। চাষীদের দেওয়া তথ্যমতে, ১ কেজি লবণ উৎপাদনের খরচ ৮ দশমিক ৭৫ টাকা। চাষী বিত্রিু করছেন ৬ টাকায়। মধ্যস্বত্বভোগীর কাছ থেকে মিলার কিনছেন ৮ দশমিক ৫০ টাকায়। প্রত্রিুয়ার পর উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ২৪ থেকে ২৫ টাকা। বাজারে খুচরা বেচা হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। অথচ গত বছর চাষী লবণ বেচা-কেনা করেছে ৬ টাকা কেজিতে প্রতি কেজি লবণ বেচাকেনা করে পাওয়া যাচ্ছে জ্জ টাকা বা তারও কম। এই সামান্য মূল্যে কি করে লবণ বেচাকেনা করেন চাষীরা। ফলে মাঠের পর মাঠ সাদা লবণের স্তুপ পড়ে আছে। উপায় না পেয়ে চাষীরা উৎপাদিত লবণ মাঠে গর্ত খুঁড়ে সংরক্ষণ করেন। পরবর্তী সময়ে দাম বাড়লে যেন বেচাকেনা করা যায়। কিন্তু এভাবে তো সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়। অনেক চাষী উচ্চ সুদে টাকা নিয়ে লবণ উৎপাদনে নামেন। মৌসুমে ন্যায্য মূল্যে লবণ বেচাকেনা করলে ৮০ শতাংশ চাষী পথে বসবেন বলে জানা যাচ্ছে। কার্গো বোটের মালিকদের নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে লবণের এ বিশাল খাত হুমকির মুখে পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
লবণ চাষে লাভ লোকসানের চিত্র তুলে ধরেন হোয়ানকের লবণ চাষী নুরুল ইসলাম। তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন তার চোখ টলমল করছিল। তিনি বলেন, জমি বর্গা, পানি, পলিথিন, শ্রমিক আনুষঙ্গিক সহ চাষীদের প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে গড়ে খরচ হয় ৩০ টাকার উপরে। যখন বেচতে যাই, তখন কোনোভাবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার বেশি পাইনা। প্রতি মণে লোকসান গুণতে হচ্ছে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। শাপলাপুরের লবণ চাষী দেলোয়ার হোসেন দুলাল বলেন, এটি আমাদের বাপদাদার পেশা। লবণ মাঠ, পানের চাষ ছাড়া তেমন কোনো কৃষিকাজ জানিনা। লবণের দাম না বাড়লে আমাদের মতো চাষীদের মেরে ফেলা ছাড়া উপায় নেই।
ধলঘাটা ইউনিয়নের লবণ চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, এবারের লবণের দাম নিয়ে খুব শংকিত আছি। এভাবে লবণের দাম হলে আমাদেরকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই সরকারের উচিত লবণ দামের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা। তিনি আরো বলেন, কম দামের কারণে এই মৌসুমে আমাদের উৎপাদন ব্যয়ও উঠবে না। আর দামের পতন যদি দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকে, তাহলে পরিবারের মুখে ভালো খাবার তুলে দেওয়া কষ্টসাধ্য হবে।
মহেশখালীর নাগরিক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রুবেল বলেন, লবণের উৎপাদন খরচের তুলনায় বিত্রুয় মূল্য অনেকটাই কম, তার কারণে লোকসান দিয়ে লবণ বিত্রিু করতে পারছি না। সরকার সবকিছু সংস্কার করলেও লবণের মূল্য নিশ্চিত করতে পারেন নি। তাই লবণ চাষীদের ঘরে নিরব কান্না।
বিসিকের কক্সবাজার জেলার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপপরিচালক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় লবণের দাম কম হলেও চাহিদা অনুযায়ী দাম বৃদ্ধি পাবে।