পিরোজপুর সংবাদদাতা : জুলাই সনদ এখনও আইনি ভিত্তি পায়নি। এটিকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। গণভোট দিতে হবে; আর সেই গণভোট নির্বাচনের আগেই দিতে হবে। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে নির্বাচন করে আর কেউ পার পাবে না। নির্বাচনে কারচুপির যেকোনো অপচেষ্টা জনগণ রুখে দেবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করলে কি করা হবে, ভার্সিটির সচেতন ছাত্র সমাজ তা দেখিয়ে দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে কোন রকমের ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করলে জনগণ সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিবে। গত শনিবার ১৮ অক্টোবর পিরোজপুর জেলা শাখার উদ্যোগে আমীরে জামায়াত নির্বাচনের ভোট গ্রহণ উপলক্ষে আয়োজিত রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল এসব কথা বলেন।

তিনি উদ্ধৃতি দিয় বলেন, আল্লাহ ঈমানদারদের মধ্যে থেকে একজন নবী পাঠিয়ে মুমিনদের তাঁর আয়াত শুনিয়ে জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে এবং কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআনে এই আয়াতের আলোকে তিনি প্রশ্ন করেন, নবী রাসুলগণ কোরআনের আয়াত শুনিয়ে মানুষদের পরিশুদ্ধ করেন, জ্ঞান শিক্ষা দিবেন —এসব শিক্ষা অর্জন করে মানবজাতি কি করবে? তিনি অন্য একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মানুষ নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করে কৌশল শিখে মানব কল্যাণ করবেন। আমাদের দায়িত্ব মানব জাতির কল্যাণ করা। এজন্যই ১৯৪১ সালে জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যই ছিল আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। নবী রাসুলগন আল্লাহর এই নির্দেশই পালন করে গেছেন।

অ্যাডভোকেট হেলাল বলেন, ইসলামী রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে সৎ কাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজের নিষেধ। আমীরে জামায়াত পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, আল্লাহ রব্বুল আলামীন যদি দয়া করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আমাদের কবুল করেন, তাহলে আমরা নিজেরা দুর্নীতি করব না, কাউকে দুর্নীতি করতে হবে না। তিনি বলেন, হাশরের ময়দানে ন্যায়পরায়ণ শাসক এক নম্বরে থাকবে। আমরা এখন শত চেষ্টা করেও দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনা। অনুরোধ করতে পারি, পরামর্শ দিতে পারি —কিন্তু বন্ধ করতে পারিনা। বন্ধ করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

আল্লাহর রাসূল সাঃ তার সাহাবারা ঘরে বসেছিলেন না, তারা দ্বীনের দাওয়াত দিতে পথে নেমেছিল। তারা এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি না করলে এত জুলুম নির্যাতনের শিকার হতেন না। বরং সমাজে তারা সকলের প্রিয় হয়ে থাকতে পারতেন। এখন রাসুল সাঃ নেই, সাহাবা নেই, আমাদের এখন সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

মানুষের মাঝে আজ জামায়াতের ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। রুকন ভাই বোনদের মানুষের কাছে কাছে গিয়ে মানুষের সেই আগ্রহকে ভোটদানে উৎসাহিত করতে হবে। আমরা যদি সে দায়িত্ব পালন করতে গাফিলতি করি, তাহলে আমাদেরকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের উদয়াস্ত কাজ করে যেতে হবে।

হেলাল বলেন, অতীতে আওয়ামী লীগ মানুষদেরকে বিভিন্ন বয়ান দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামী বয়ান এদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। এদেশে আর আওয়ামী বয়ান চলবে না। যারাই আওয়ামী বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে, জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে। আগামীতে নির্বাচন করতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে নির্বাচন করে আর কেউ পার পাবে না। নির্বাচনে কারচুপির যেকোনো অপচেষ্টা জনগণ রুখে দেবে। ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করলে কিভাবে তা রুখে দিতে হবে ভার্সিটির ছাত্র সমাজ তা দেখিয়ে দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে জনগন কাউকে ষড়যন্ত্র করতে দিবে না দিবে না দিবেনা।

সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে পিরোজপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রব এর উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে রোকন সম্মেলন শুরু হয়। অনুষ্ঠানে মাওলানা হারুনুর রশিদ দারসুল কুরআন পেশ করেন। জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ জহিরুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও নির্বাচন প্রিজাইডিং অফিসার মাওলানা ফখরুদ্দিন খান রাযী, পিরোজপুর-২ আসনের এমপি প্রার্থী শামীম সাঈদী, বিভিন্ন উপজেলা আমীর সেক্রেটারি এবং জেলার সকল নারী পুরুষ রুকনরা। উপস্থিত রুকনগণ গঠনতন্ত্রের আলোকে আমীরে জামায়াত নির্বাচনের জন্য গোপন ব্যালটে ভোটদান করেন। নির্বাচন পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও পিরোজপুর জেলা তদারককারী মাওলানা ফখরুদ্দিন খান রাযী। উল্লেখ্য প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর আমীরে জামায়াত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।