গ্রাম-গঞ্জ-শহর
কাপ্তাইয়ে পানি সংরক্ষণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ
দশ কিলোমিটার এলাকায় অনাবাদি কৃষি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার লক্ষে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে বারঘোনিয়া খাল সম্প্রসারণ, পানি নিস্কাশন ও সংরক্ষণ প্রকল্পে ব্যাপক দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
Printed Edition

কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) সংবাদদাতা : দশ কিলোমিটার এলাকায় অনাবাদি কৃষি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার লক্ষে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে বারঘোনিয়া খাল সম্প্রসারণ, পানি নিস্কাশন ও সংরক্ষণ প্রকল্পে ব্যাপক দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিন বছর পূর্বে কাজ শুরু করা হলেও প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হচ্ছে না। ঠিকাদার প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যাদেশ না মানায় এলাকার কৃষকরা এর সুফল পাচ্ছে না। ভূক্তভোগিরা অভিযোগ করে বলেন, পরিকল্পিত ভাবে খাল খনন করা হয়নি এবং খালের ওপর চারটি পানি নিস্কাশন ও সংরক্ষণ (স্লইস গেট) প্রকল্পে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও গাফেলতির কারনে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না।
জানা যায়, কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের কর্ণফুলী নদী থেকে যৌথ খামার পর্যন্ত প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকায় এক হাজার ৪৮ জন কৃষকের ২৭৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের সুবিধাত্বে বারঘোনিয়া খালের ওপর চারটি স্লইস গেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত ২০২২ সালের ১ মার্চ টেকসই ক্ষুদ্রকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পর আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর তত্ববধানে বারঘোনিয়া খাল সম্প্রচারণ, পানি নিস্কাশন ও সংরক্ষণ প্রকল্পটি প্রায় আড়াই কোটি ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়। “মেসার্স ইউনুছ এন্ড ব্রার্দাস” প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কার্যাদেশ পায়। স্লুইস গেট পরিচালনা করার জন্য স্থানীয় ভুক্তভোগিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশ সদস্য স্থানীয় কৃষকের অস্তিত্ব নেই বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। বারঘোনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ শামীম বলেন, অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে পানি নিস্কাশন ও সংরক্ষণ প্রকল্পে চারটি স্লইস গেট নির্মাণের ওয়ার্ক অর্ডার উল্লেখ থাকলেও মাত্র দুটি স্লইস গেট নির্মাণ করা হয়েছে। বাকী দুটি স্লুইস গেটের কোন অস্তিত্ব নেই। বারঘোনিয়া তংচংগ্যা গ্রামের রাজ্য তংচংগ্যা ও প্রিয়ময় তংচংগ্যা বলেন, বারঘোনিয়া খালের ওপর ইকোপার্কের মুখে একটি স্লুইস গেট ও এক কিলো পরে তংচংগ্যা পাড়ায় আরেকটি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছে। ইকোপার্কের মুখে স্লুইস গেটে এখনো পানি আটকানো হয়নি। এবং তংচংগ্যা পাড়ায় স্লুইস গেটে পানি ধরে রাখায় প্রায় আধাকিলো এলাকায় আট-দশ জন কৃষক কৃষি জমিতে পানি সেচ দিতে পারছে। প্রায় ছয়-সাত কিলো এলাকায় খালে পানি না থাকায় শতশত একর কৃষি জমি অনাবাদি পড়ে আছে। স্লুইস গেট পরিচালনা কমিটির সদস্য মৃনাল তংচংগ্যা গোরাঙ্গ বলেন, বিগত সরকারের সময়ে চন্দ্রঘোনা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান। প্রকল্পে নিন্মমানের কাজ হলেও ভয়ে গ্রামবাসীরা বাঁধা দিতেন না। সিসি ব্লক ও স্লুইস গেট নির্মাণে নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে প্রকল্পের কাজ করা হয়েছিল। বিগত সরকার পতনের পরও এখনো ঠিকাদার নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যাদেশ মেয়াদ অতিক্রম হলেও দুটি স্লুইস গেট এখনো নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। খাল খনন দেড় কিলো করা হলেও বাকী ছয়-সাত কিলো এলাকায় খাল খনন করার কোন লক্ষণ নেই।
প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে প্রকল্প বাস্তবায়কারী সাব কন্ট্রাকটর মো. কামরুল ইসলাম বলেন, খালের ওপর দুটি স্লুইস গেট করা হয়েছে এবং সিসি ব্লক নির্মাণ ও স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগিদের অফিস ভবন সম্পন্ন হলেও আসবাবপত্র এখনো দিতে পারিনি।
কাপ্তাই উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম চৌধুরী ও অফিস কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন ইসলাম বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে বারঘোনিয়া খালে পানি নিস্কাশন ও সংরক্ষণ (স্লইস গেট) নির্মাণ প্রকল্প কার্যাদেশ মোতাবেক সম্পন্ন করা হয়নি। অনিয়মের বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।