নান্দাইল (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা : ময়মনসিংহের নান্দাইলে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা, অভিভাবকের একাধিক অভিযোগ, প্রার্থীর নির্বাচন প্রত্যাহার ও আদালতে মোকাদ্দমা থাকা সত্বেও উৎসব মুখরহীন পরিবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো আচারগাঁও ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির নির্বাচন-২০২৫। শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দাখিল, আলিম ও ফাজিল এ তিনটি স্তরের মোট ৯৭৮ জন ভোটারদের বিপরীতে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় পাশ এবং আরেকজন প্রার্থীতা প্রত্যাহার করায় বাকী ৫ জন প্রার্থীর উপস্থিতি থাকলেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই নঘন্য। এছাড়া মনোনয়ন পত্র যাছাই-বাছাইচালে কৌশলে আনোয়ারুল ইসলাম নামে ফাজিল স্তরের একজন প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করে দেওয়া হয়। অপরদিকে একই স্তরের শহিদ মিয়া নামে আরেক প্রার্থী ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা এবং ওই গভর্ণিং বডির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঈশ^রগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মোকাদ্দমা হওয়ার কারণে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে উনার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। সরজমিন দেখাগেছে, দুপুর ১২টার দিকে ভোট কেন্দ্রে প্রার্থী ব্যতীত ভোটারদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র ভোট কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্পে ভোটারদের সিরিয়াল প্রদানের জন্য সহযোগী ও সুধীজনদের উপস্থিতি ছিল। যা নির্বাচন কেন্দ্রে থাকা প্রার্থীরা তাদের বক্তব্যে এর সত্যতা স্বীকার করেন। এছাড়া উক্ত নির্বাচনের ৩নং ব্যালট এর প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম ভোটার তালিকায় তিন জায়গায় তার নাম রয়েছে। অর্থাৎ সে নিজেই তিনজনের ভোট দিতে পারবে। এরকম নানা অভিযোগ রয়েছে ভোটার তালিকায় দায়িত্বে থাকা আচারগাঁও ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল হাই ও অত্র মাদ্রাসার সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি লূৎফুন্নাহার এর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে অভিযোগকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, এ নির্বাচনে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল হাই তাঁর চাকুরীর বয়স মাত্র ৮ মাস রয়েছে। এরই মধ্যে তরিঘরি করে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা দ্বারা গভর্ণিং বডির নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে করে নিয়োগ ব্যাণিজ্য সহ নিজেদের স্বজনদের চাকুরী দেওয়ার জন্য ৯টি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই এখন তার আসল উদ্দেশ্য। ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়। এছাড়া ভোটার তালিকায় ত্রুটি দেখে অত্র মাদ্রাসার স্বার্থে ও শিক্ষার মান উন্নয়নের স্বার্থে আমি আদালতে উক্ত নির্বাচনের বিরুদ্ধে মোকাদ্দমা দায়ের করেছি। এছাড়া ইতিপূর্বৈ ওই অধ্যক্ষ নিজ মেয়ে সহ স্বজনদেরকে এই মাদ্রাসায় চাকুরি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু চালকল মালিকরা
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা : কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে মিলগেটে চালের পাইকারি দামে একের পর এক বৃদ্ধির প্রভাবে খুচরা বাজারে দেখা দিয়েছে মারাত্মক অস্থিরতা। গত দুই সপ্তাহে মিনিকেট চালের কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়, যা আগে ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা বলেছেন, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে অসাধু চালকল মালিকরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
তাদের মতে, ‘মিনিকেট’ নামে কোনো ধান না থাকলেও সরু চালের নাম করে দাম বাড়ানোর ফাঁকফোকর কাজে লাগানো হচ্ছে। মেসার্স মা ট্রেডার্সের মালিক মনজুরুল হক জানান, অর্ডার দিয়েও মিলগেট থেকে চাল সংগ্রহ করতে পারছি না। তার মতে, বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বারবার চালের দাম বাড়ায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোয় ব্যয় সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আক্তার হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, অসাধু ব্যবসারা কৌশলে দাম বাড়াচ্ছেন। প্রশাসন যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সংকট আরও বাড়বে। সরকারের উচিত নজরদারি বাড়ানো ও আসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা।
এদিকে চালকল মালিকরা দাবি করছেন, ধানের সংকট এবং দাম বৃদ্ধির কারণেই চালের দাম বেড়েছে। মিল মালিক লিয়াকত আলী বলেন, প্রতি মণ ধানের দাম ৩০০ টাকা বেড়ে গেছে, তবুও বাজারে পর্যাপ্ত ধান মিলছে না। ফলে মিনিকেট চালের সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। খাজানগর মোকামে ধান ও চালের মজুদ খুবই কম। বর্তমানে অর্ডার নিয়েও ব্যবসাীদের কাছে চাল সরবরাহ করতে পারছেন না সিংহভাগ মিল মালিক। সরকারের উচিত চাল আমদানি করা।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন জানান, প্রতিবছর এই সময়ের সরু ধান ও মিনিকেট চালের দাম বাড়ে। দুই-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ সরু ধানের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০০ টাকা।
এক সপ্তাহ আগে প্রতি মণ ধানের দাম ছিল ১ হাজার ৯০০ টাকা, সেই ধান বর্তমানে ২ হাজার ৫০০ টাকা। ধানের দাম বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে চালের দাম বেড়েছে। তবে বোরো ধান উঠতে শুরু করেছে, আশা করছি পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তিনি চাল আমদানির পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান জানান, বাজার মনিটরিং টিম সক্রিয় রয়েছে এবং তা আরও জোরদার করা হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, ধানের দামের প্রভাব থাকলেও কেউ যদি অতি মুনাফার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।