৪০ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটছে। আবারো প্রাণপ্রবাহ ফিরে পাবে পদ্মার অন্যতম শাখা নদী বড়াল। অবশেষে শুরু হয়েছে রাজশাহীর বড়াল নদীর স্লুইসগেট অপসারণ কাজ। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ চার দশকের একটি অপ্রয়োজনীয় ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক প্রকল্প অপসারিত হচ্ছে। রাজশাহী থেকে চারঘাট উপজেলার প্রবেশ মুখে বড়াল নদীর অবস্থান। এটি মূল নদী পদ্মা থেকে বের হওয়া অন্যতম শাখা। জানা গেছে, রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলের প্রকৃতি, পরিবেশ ও কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বড়াল নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই নদীর স্বাভাবিক নাব্য ফিরিয়ে আনতে এ নদীর উপর নির্মিত স্লুইসগেট অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এ উদ্যোগকে নদী ও পরিবেশ রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীরা। পদ্মা নদীর বন্যার পানি থেকে চারঘাটসহ আশপাশের এলাকাকে রক্ষার নামে ১৯৮৪ সালে বড়াল নদীর উপর স্লুইসগেটটি নির্মাণ করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো। প্রাথমিকভাবে এটি উপকার দিবে বলে মনে করা হলেও সময়ের সাথে সাথে নদীর দু’পাশে দখল, দূষণ এবং অপরিকল্পিত খননের কারণে বড়াল ক্রমেই মৃতপ্রায় খালে পরিণত হয়। নদীর উৎসমুখে পলি জমে পানিপ্রবাহে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করে। কয়েকবার খনন কাজ হলেও কাক্সিক্ষত সুফল না মেলায় স্থানীয়রা এবং পরিবেশবাদীরা স্লুইসগেট অপসারণের দাবিতে সোচ্চার হন। এই প্রকল্পটিকে অপরিকল্পিত, অপ্রয়োজনীয়, অর্থের অপচয় ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে গণ্য করে এনিয়ে গণমাধ্যমে প্রচুর প্রতিবেদন প্রকাশিত ও গবেষণা পত্র রচিত হয়। অনেক আন্দোলনও চলে এর অপসারণের দাবিতে।

এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৯ মে বড়াল নদী পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি জানান, বড়ালের পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে সরকার সমন্বিত পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ১৮ কিলোমিটার নদীপথ পুনঃখননের পাশাপাশি মুখে থাকা স্লুইসগেটও অপসারণ করা হবে। এই ঘোষণার পর গত ১২ জুন পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইসগেটের কপাট খোলার কাজ শুরু করে। প্রতিটি গেটের প্রস্থ ১০ ফুট করে মোট ৩০ ফুট। ইতোমধ্যে তিনটি গেট সম্পূর্ণভাবে খুলে দেয়া হয়েছে, ফলে নদীতে পানিপ্রবাহ বাড়ার আশা করছেন পদ্মা-পাড়ের মানুষ। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বড়াল নদীর পানিপ্রবাহ বাড়াতে স্লুইসগেটের কপাট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরবে এবং মৃত বড়াল আবারও প্রাণ ফিরে পাবে বলে আমরা আশাবাদী।