খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলাধীন গাজীরহাট ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের আবালগাঁতি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আতাই নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে গ্রামবাসী। নদীর পাড়ে বসবাসরত গ্রায় ১০ থেকে ১২টি পরিবারের ২০ শতক জমিতে নির্মাণাধীন ঘরবাড়ি এবং ফসলী জমি বিলীন হয়েছে আতাই নদীতে। এখানে এখনও অনেক পরিবার খুবই ভীতসন্ত্রস্ত অসহায় অবস্থায় বসবাস করছেন। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে শৈলেন বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামে আতাই নদীর পাড়ে বসবাস করে আসছি আমরা। হঠাৎ এই নদী ভাঙনে আমার ১০ শতক জমির উপরে নির্মাণ করা বসতি ঘর, শস্যক্ষেত ফলজ ও বনজ বৃক্ষ এবং পানের বরজ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন যেখানে বসবাস করছি এটুকুও যেকোনো সময় নদীতে ভেঙ্গে যেতে পারে।
ভুক্তভোগী শৈলেন বিশ্বাসের ছেলে একই এলাকার বাসিন্দা বিধান বিশ্বাসের স্ত্রী মিতা বিশ্বাস বলেন, এখানে আমাদের জমির পাশাপাশি বসবাসরত ৬ থেকে ৮টি পরিবারের বসতবাড়িও নদীতে ভেসে যায়। নদীতে ভেসে যাওয়া জমির মালিকেরা অন্য জায়গায় চলে গেছে। সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করে সেখানে বসবাস করছে। তবে আমরা এখন যাবো কোথায়? আমার শ্বশুর স্বামী সবাই যৌথভাবে এ বাড়িতেই লোহা থেকে পেরেক তৈরি করে। এ পেরেক বিক্রি করেই আমাদের জীবন যাত্রা নির্বাহ করি। কোনো রকমের মোটা ভাত ও মোটা কাপড়ে সংসার চালায়। এই সামান্য উপার্জনে মোটামুটিভাবে সংসার চললেও নতুন করে অন্য কোথাও বসতি স্থাপন করা সম্ভব নয়। প্রতি রাতেই আমরা ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রাত্রি যাপন করি। সব সময় মনে হয় এই বুঝি নদীর পানি ঘরবাড়ি সহ আমাদেরও ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। শৈলেন বিশ্বাসের পাশের বাড়িতে দুই সন্তানের জননী বিধবা নমিতা বিশ্বাস নদী ভাঙনের ভয়ে বসতবাড়ি ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গিয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের মধ্যে আরও রয়েছেন মহিদুল কাজী, গোলক অধিকারী, মহিদুল কাজী বলেন, আমার ১৫ কাটা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখানে বসবাসকারী সবাই ঝুঁকিপূর্ণভাবে দিনাতিপাত করছে। নদীতে জোয়ার আসলে পানিতে তলিয়ে যায় প্রায় দেড়শত (১৫০) পরিবার। আবালগাঁতি গ্রামবাসী বলেন, আমরা এখনও পর্যন্ত কোনো প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস পাইনি। উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কেউ কোনো অনুদান দেয়নি। এখানে এখনও অন্তত দেড়শ’ পরিবারের বসতিঘর ভাঙনের মুখে রয়েছে বলে জানান আবালগাঁতি গ্রামের বাসিন্দারা। তারা সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে দিঘলিয়া উপজেলার ১ নং গাজীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. সোহাগ মুন্সীর সাথে। তিনি জানান, গাজীরহাট ইউনিয়নের আবালগাতী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পরিবার আতাই নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ইতোমধ্যে এ সকল পরিবারের অনেক জমি ও বসতঘর, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিয়ে জান-মালের আশ্ঙ্কায় রয়েছেন। তাদের সবকিছু কখন যেন নদীগর্ভে পতিত হয়।