চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এক মুক্ত সংলাপে আলোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন- জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকা সত্ত্বেও কেন পাঁচ আগস্টের পর থেকে তাদের আর দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে না। বক্তারা বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর এখন সময়ের দাবি। রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনে নারী ও তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে গণতান্ত্রিক অগ্রগতি থেমে যেতে পারে।
গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে: রাজনৈতিক পরিসরে নারী এবং তরুণদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়। ‘রাজনীতিতে নারী ও যুবাদের ক্ষমতায়ন’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এটি আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবী প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বিএনপি নেতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় রাজনৈতিক ঐক্য অপরিহার্য। বিএনপি চাইছে, নারীদের শুধু অংশীদার নয়, নেতৃত্বে আনার পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হোক।” তিনি জানান, যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে দলটি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নারীর অংশগ্রহণ আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, “দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে নারীদের সক্রিয়তা ছিল, কিন্তু মূলধারার রাজনীতিতে তাদের অন্তর্ভুক্তি এখনো সীমিত। গণতন্ত্র ও নারীর অংশগ্রহণ— এ দুটিকে পৃথক করে দেখা ভুল।”
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অশোক সাহা বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানকে বৈষম্যবিরোধী এক তরুণ জাগরণ হিসেবে ইতিহাসে স্থান দেওয়া উচিত। এবার তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল নজিরবিহীন। তবে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি এক প্রকার দানবে রূপ নিয়েছে। নারীবিদ্বেষ, আদিবাসী বিদ্বেষ এবং অনলাইন হয়রানির বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সমন্বয়কারী জুবাইরুল হাসান আরিফ বলেন, “আমরা এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছি, যাতে ১০০টি সংসদীয় আসনে কেবল নারীরাই প্রার্থী হতে পারেন। মূলধারার অনেক রাজনৈতিক দল এখনো বুঝে উঠতে পারেনি— আন্দোলনের পর দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা কতটা বদলে গেছে।”
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিজিএস সভাপতি জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান এবং গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ২০০ প্রতিনিধি এ সংলাপে অংশগ্রহণ করেন।
বক্তারা বলেন, নারীর নেতৃত্ব ও তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সমাজে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই রাজনৈতিক সংস্কার সম্ভব নয়। তারা আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতের রাজনীতিতে নারী ও তরুণদের উপস্থিতি কেবল প্রতীকি না হয়ে, বাস্তব নেতৃত্বে পরিণত হবে।