নুরুল আমিন মিন্টু, চট্টগ্রাম ব্যুারো : চট্টগ্রাম শহরের ১১ ও ১৩ নম্বর রুটে চলাচল করছে শতাধিক লক্কর-ঝক্কর অবৈধ বাস। ট্রাফিক ইন্সপেক্টরদের তত্ত্বাবধানে চলা এসব অবৈধ গাড়ির কারণে বিআরটিএর অনুমোদপ্রাপ্ত বৈধ গাড়ির মালিক শ্রমিকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। সে সাথে এসব বাসের কারণে বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এতে নষ্ট হচ্ছে কর্মজীবী মানুষের শ্রম ঘণ্টা। মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ি জন-জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায়, অবৈধ হিউম্যান হলার রাইডারগুলোকে ভেঙ্গে অবৈধভাবে বাসের বডিতে রূপান্তর করে, বিভিন্ন বাসের চার বা ছয় চাকার ডকুমেন্টস দিয়ে বিআরটিএ অনুমোদিত ছাড়া নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। এসব গাড়ির ডকুমেন্টস এর সাথে গাড়ির আকার বা বডি ও চাকার সাথে কোন মিল নেই। এ সব বাসে ১৩ নম্বর হিউম্যান হলার ও লেগুনার ১২ থেকে ১৪ সীটের গাড়ির ডকুমেন্টসগুলো অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে । এই অবৈধ গাড়িগুলো ১১ নম্বর এবং ১৩ নম্বর রুট লিখে সিটি গেইট, অলংকার, সিমেন্ট ক্রসিং, কাটগড় ও এয়ারপোর্ট পর্যন্ত কিছু চাঁদাবাজের ছত্রছায়ায় ও টিআইদের যোগসাজশে চলাচল করছে।

এতে ওইসব রুটে চলাচলকারী গাড়ির বৈধ মালিক ও শ্রমিকরা দৈনিক আয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এবং পাশাপাশি কারণে অকারণে বৈধ গাড়ীগুলোকে প্রতিনিয়ত মামলা ও নানানভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ(সিএমপি) কমিশনার বরাবর দাখিল করা এক অভিযোগ পত্র হতে এ সব তথ্য জানা গেছে।

১১ নম্বর এবং ১৩ নম্বর রুটে চলাচলকারী বৈধ গাড়ির মালিকদের দেয়া সাম্প্রতিক অভিযোগ পত্রে বলা হয়, অবৈধ ১শ’ থেকে দেড়শ’ গাড়ি থেকে দৈনিক ২শ’ টাকা ও মাসে ২ হাজার টাকা করে চাঁদাবাজ সাইদুল ইসলাম (সুমু) ও সিরাজুল ইসলাম নিপুর নেতৃত্বে মো. রবিউল ইসলাম, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের ওসি প্রদীপের হিসাবরক্ষক ইয়াবা সম্রাট রাসেল দে ও নেভি জসিম গং, কাটগড়, ফ্রি-পোর্ট ও অলংকার এলাকায় চাঁদা আদায় করছে। এই টাকার একটা অংশ টিআই পাহাড়তলী ছামিউর রহমান খান, টিআই আকবরশাহ আলমগীর হোসেন, টিআই সিটি গেইট মো. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, টিআই হালিশহর একেএম আসাদুজ্জামান, টিআই বন্দর মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, টিআই সল্টগোলা মো শহিদুল আলম, টিআই ইপিজেড মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সুজন, টিআই এয়ারপোর্ট মো. মনিরুল ইসলাম, এবং টিআই পতেঙ্গা মো. সেলিম খানকে দেয়া হয়। ফলে অবৈধভাবে চলাচলরত গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে কোন মামলা বা আটক হয় না।

তাছাড়া এসব অবৈধ গাড়ি হতে মাসিক চাঁদা নেন টিএসআই মো. জাহিদ হোসেন। এসব গাড়ি প্রতি মাসে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা আদায় করা হয়। আর এসব গাড়িগুলোর যেন কোন মামলা বা আটক না হয় সেজন্য তিনি ট্রাফিক বিভাগের দক্ষিণ জোন থেকে পশ্চিম বিভাগে পোস্টিং নিয়েছেন। অথচ গত ৫ জানুয়ারি মাসে তার ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগ থেকে ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগে পোস্টিং হয়েছিল। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তিনি ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগে ডিউটি করছেন শুধু মাত্র এই সমস্ত অবৈধ গাড়িগুলোকে রাস্তায় চলাচলে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য।

চট্টগ্রাম শহরে এসব অবৈধ গাড়ি চলাচলের কারণে নগরের একেখান মোড়, অলংকার মোড়, বড়পোল মোড়, ইপিজেড ও কাটগড় মোড় সহ গুরুত্বপূর্ণ মোড় গুলোতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। একইসাথে ১১ নম্বর রুটে চলাচল করা বাসের সাথে ঘটছে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা। এই অবৈধভাবে গাড়ীগুলো চলাচলের কারণে গাড়ির বৈধ মালিকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। কথিত চাঁদাবাজ সাইদুল ইসলাম (সুমু) ও সিরাজুল ইসলাম নিপু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিভিন্ন রুটে লুসাই স্টিকার ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করতেন এবং বর্তমানেও তাদের চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে।

অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, চাঁদাবাজ সাইদুল ইসলাম (সুমু) ও সিরাজুল ইসলাম নিপু মাধ্যমে গাড়ি আটকের ছাড়পত্র নিতে গেলে মামলার টাকা ৫০শতাংশ ছাড় দেয়া হয়া হয়। কিন্ত বৈধ মালিকগণ গাড়ির মামলা ও গাড়ির ছাড়পত্র নিতে গেলে কোন ছাড় দেয়া হয় না।

নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড় যানজট মুক্ত ও চাঁদাবাজ মুক্ত করে পরিবহন জগতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দ্রুত অবৈধ গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়। এই বিষয় বক্তব্য নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) আসফিকুজ্জামান আকতারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কল না ধরায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।