চট্টগ্রামে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, কিন্তু মশক নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না- এমন অভিযোগ তুলেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম। সংগঠনটির দাবি, নগরীতে ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন সিটি’ কেবল বিলবোর্ড ও স্লোগানে সীমাবদ্ধ, বাস্তবে-এর কোনো প্রতিফলন নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর তথ্যমতে, ২০২৪ সালে যেখানে লার্ভার ঘনত্ব ছিল ৩৬ শতাংশ, চলতি বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫.২৯ শতাংশে—যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সীমা ২০ শতাংশের চেয়ে চারগুণ বেশি। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়ে ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’ বলে উল্লেখ করেন তারা।
ক্যাব নেতাদের অভিযোগ, চসিকের মশকনিধন কার্যক্রম ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান কোনো উন্নতি নেই। মেয়র ডা. শাহাদত হোসেন দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছুটা তৎপরতা শুরু হলেও প্রশাসনিক দুর্বলতা ও কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে তা কার্যকর হয়নি। নালা-নর্দমা, খাল ও ঘরের চারপাশে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি পরিষ্কার না করায় এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উপস্থিতিও প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
তারা মনে করেন, শুধুমাত্র সিটি করপোরেশনের একক প্রচেষ্টায় মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, এমনকি সাধারণ নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে একটি সমন্বিত ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ হাতে নেওয়া প্রয়োজন।
চিকুনগুনিয়া বিষয়ে ক্যাবের অভিযোগ, চট্টগ্রামে সরকারি পর্যায়ে এখনো রোগটি শনাক্তের কোনো ব্যবস্থা চালু হয়নি। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবের ওপর নির্ভর করছেন, যেখানে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে। তারা স্মরণ করিয়ে দেন, করোনাকালেও ল্যাব, ওষুধ ও ডাব নিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মানুষের পকেট কাটা হয়েছিল, তখনও প্রশাসনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
এ অবস্থায় ক্যাব নেতারা অবিলম্বে বিনামূল্যে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা এবং স্বাস্থ্য খাতে নজরদারি জোরদারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক মো. সেলিম জাহাঙ্গীর, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, যুব ক্যাব মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান, পলিসি ইনফ্লুয়েন্স গ্রুপ চট্টগ্রামের সভাপতি মুসা খান, সদস্য সচিব আবু মোশারফ রাসেল এবং যুগ্ম সদস্য সচিব সাঈদুর রহমান মিন্টু প্রমুখ।