গাজীপুর মহানগরের ভোড়া এলাকায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের সময় পুলিশের দুই সদস্য হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। সোমবার (২৪ নভেম্বর) মধ্যরাতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। আহত এএসআই আব্দুর রশিদ ও কনস্টেবল সাইফুল ইসলামকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসায় রাখা হয়েছে।

ঘটনার পর স্থানীয়দের কাছ থেকে সাদা পোশাকধারীদের বিরুদ্ধে নগদ ৫ লাখ টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এছাড়া কিছু ঘরে ভাঙচুরের কথাও বলা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ বলছে—অভিযানের সময় সংঘবদ্ধ একটি দল পুলিশের ওপর হামলা চালায়।

পুলিশ জানায়, ওই রাতে মাদক মামলার আসামি আব্রাহাম রায়হানের আলামত জব্দ এবং মামলার পলাতক মাদক কারবারি মমতাজ ও শাহ জামাল ওরফে মালা পাগলাকে ধরতে গিয়ে আকস্মিক হামলার শিকার হন দুই পুলিশ সদস্য। হামলার সময় এএসআই রশিদ জ্ঞান হারান এবং কনস্টেবল সাইফুল ইসলামও দুই দফায় গণহামলার শিকার হন।

এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগান চার্জ করা হয় বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। ধস্তাধস্তির সময় একটি সরকারি অস্ত্র ও ওয়াকিটকি হারিয়ে গেলেও পরে সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনারের কঠোর ও আত্মবিশ্বাসী ঘোষণা

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ ইসরাইল হাওলাদার ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। তিনি বলেন—ঘটনার সব অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হবে—অন্যায় করলে কেউ ছাড় পাবে না।

তিনি আরও বলেন—ঘটনার বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আমরা কাউকেই ছাড় দেব না—সে স্থানীয় প্রভাবশালী, সাধারণ ব্যক্তি, কিংবা পুলিশ সদস্য—অপরাধ করলে আইনের মুখোমুখি হতেই হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন—মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে একইসঙ্গে জনগণের অভিযোগও আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি। অভিযানের নামে কেউ যদি দায়িত্বের বাইরে গিয়ে অনিয়ম করে থাকে, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। আইন সবার জন্য সমান। তিনি বলেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশ জনগণের আস্থা রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

তিনি স্থানীয়দের ধৈর্যের প্রশংসা করে বলেন—আমরা চাই মানুষ পুলিশের ওপর আস্থা রাখুক। তাই প্রতিটি ঘটনা স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে ক্লোজ করি। সত্যের বাইরে আমরা একচুলও যাব না।

কনের বাবা খোরশেদ আলম দাবি করেন, সাদা পোশাকধারী দুই ব্যক্তি তার বাড়িতে ঢুকে নগদ টাকা ও স্বর্ণ নেওয়ার পর আবার মোটরসাইকেল আনতে গেলে জনতা তাদের গণধোলাই দেয়।

এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার জানান— অভিযোগগুলো তদন্ত কমিটি যাচাই করছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট যে-ই হোক, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জনগণের সহযোগিতা ছাড়া মাদক দমন অসম্ভব এমন মন্তব্য করেছেন গাজীপুর মেট্রো পুলিশের ডিসি (অপরাধ-উত্তর) রবিউল হাসান।

গাজীপুর সদর মেট্রো থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী হাসান বলেন—মাদকবিরোধী অভিযানে বাধা সৃষ্টি অত্যন্ত দুঃখজনক। অভিযুক্তদের শনাক্তে আমরা কাজ করছি। মামলা প্রক্রিয়াধীন।