বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই দিতে হবে। নির্বাচিত রাজৈনৈতিক সরকার জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে সেই সনদ বাস্তবায়ন করবে এটি জাতি বিশ্বাস করে না। কারণ নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার দ্বারাই রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস হয়েছে। রাজনৈতিক স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করার ফলে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যারা রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে তাদের দ্বারা কখনোই রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব নয়। অতীতের রাজনৈতিক সরকার গুলো কেউ দুর্নীতিতে দেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান করেছে, কেউ লুটপাটের মাধ্যমে বিদেশে বেগম পাড়া গড়ে তুলেছে। এসব দলের দ্বারা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করতে হবে। তবেই দেশের মানুষ একটি সুখি-সমৃদ্ধ বৈষম্যহীন কল্যাণ ও মানবিক বাংলাদেশ পাবে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী পুরো জাতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর যেই আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে, সেই আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষায় ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করা’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল হবে।

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান ও জুলাই-বিপ্লবে খুনিদের বিচার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবীতে’- নাগরিক মঞ্চ কর্তৃক অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নাগরিক মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক আহসান উল্লা শামীমের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আলহাজ্ব মাওলানা আলতাফ হোসাইন মোল্লা। বাংলাদেশ ইসলামী দলের মহাসচিব মো. হুমায়ুন কবিরের পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক মঞ্চের উপদেষ্টা লেঃ কর্নেল (অবঃ) ফরিদুল আকবর, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সমুনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক মঞ্চের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।

ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ইসলাম ছাড়া ন্যায়বিচার কে-ও করতে পারেনি, পারবে না। ক্ষমতার পালাবদল হলেই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে না, দুর্নীতি, অপশাসন দূর হবে না। বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, অপশাসন বন্ধ করতে হলে বিদ্যমান আইনের পরিবর্তন করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। মদিনা বাসী যতদিন মানুষের তৈরি মতবাদে (আইনে) পরিচালিত হয়েছে ততদিন জুলুমের শিকার হয়েছে। কিন্তু যখনই মহানবী (সা.) ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুললেন সাথে সাথে সমাজের প্রতিটি মানুষ দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে শাসন ও শোষণের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। মদিনা বাসী এক আলোকিত সোনার মদিনা পেয়েছে। একইভাবে স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও বাংলাদেশের মানুষ শাসকগোষ্ঠীর জুলুম-নির্যাতন আর শোষণের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। কারণ বিগত ৫৪ বছর বাংলাদেশ পরিচালিত হয়েছে মানুষের তৈরি আইনে। যেই আইন শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর কল্যাণে তৈরি করা হয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর জুলুম-নির্যাতন আর শোষণের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।

নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে, সেই সময়েই নির্বাচন হতে পারে তাতে কোন সমস্যা নাই। তবে অবশ্যই সেই সময়ের আগে জনগণের দাবি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের ৭১ শতাংশ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। জনগণের দাবি উপেক্ষা করে বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচনের আয়োজন করলে সেই নির্বাচন হবে একটি প্রহসনের নাটকীয় নির্বাচন। এমন নির্বাচন জনগণ চায় না, মেনে নিবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি তার পছন্দের নির্দিষ্ট কোনো দলের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে চায়, তবে প্রহসনের নাটকীয় নির্বাচন না করে, ঐ দলকে ডেকে নিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে দিলেই পারে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হয়, জুলাই চেতনায় বিশ্বাসী হয় তবে অবশ্যই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে জনগণের দাবি মোতাবেক পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, জাতির ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে রাজপথে লড়াই করেছে ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, গণহত্যার বিচার নিশ্চিত ও পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য সেভাবেই প্রয়োজনে আবারো রাজপথে নেমে আসবে। জনগণের দাবি আদায় নিশ্চত করতেই হবে। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জুলাই চেতনা ধারণ করে দেশপ্রেমের প্রমাণ দেয়ার আহ্বান জানান। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।