বিভিন্ন দুর্যোগে আমাদের বাড়ির সামনে কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে আমাদের গ্রামে পানি ঢুকেছে। এতে আমাদের গ্রামবাসীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা বাড়িতে থাকতে পারি না আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। জোয়ারের পানিতে ঘরের ভেতরে থাকা মালামাল জিনিসপত্র সব ভেসে যায়। আমাদের ১৪ বিঘা জমি এই কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে চলে গেছে। প্রায় ১৫ দিন আগে আবার আমাদের এই বাড়ির সামনের কপোতাক্ষ নদের হরিণখোলার গ্রামের বেড়িবাঁধে ভাঙ্গনের ধস নেমেছে। নদের জোয়ারের স্রোতের গতি বৃদ্ধি পেলে ধাক্কা লাগলে যে কোনো সময় এই বাঁধ ভেঙে আবার আমাদের গ্রামে পানি ঢুকতে পারে। নদীতে জোয়ার হলে আমি প্রায় এসে এসে দেখি। একেবারে ভেঙে গেল কিনা। প্রতিবছর মে মাস আসলে আমাদের মনে খুব ভয় লাগে। আতঙ্কে থাকেন উপকুলবাসী। বেড়িবাঁধের উপর বসে কথাগুলো বলেছিলেন খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের পাড়ের হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা শাহাদাত শেখ। একই গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী মো. ওলিউল্লাহ বলেন, আমাদের জায়গা জমি যা ছিল সব এই কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে চলে গেছে। আমরা বর্তমানে অসহায় হয়ে বস্তিতে বসবাস করছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের নিজস্ব কোন জায়গা জমি নেই। অন্যের কাছ থেকে ভিক্ষা করে এনে জীবিকা নির্বাহ করছি। প্রতিবছর মে মাস আসলে আমাদের খুবই ভয় হয়। আবার কোন দুর্যোগ এসে আমাদের বসত বাড়ি কেড়ে নেয় কিনা।

ঘাটাখালি গ্রামের বাসিন্দা মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে আমাদের ভিটেবাড়ি সব নদীতে চলে যাচ্ছে। আমরা দুরবস্থার মধ্যে বসবাস করছি। কখন আবার বাঁধ ভেঙে আমাদের লোকালয়ে পানি ঢোকে। আমরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে পরিবার নিয়ে কোথায় যাব। আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর এই মে মাস আসলে আমরা আতঙ্কে থাকি। কখন দুর্যোগ আসবে। আমাদের রাতে ঠিকমত ঘুম হয় না। আমরা কোথায় যাব কী করব। উর্ধ্বতন যেসব কর্মকর্তা আছে তারা আমাদের দেখে না। দুর্যোগ হলে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে থাকি। ওখানে আমাদের না খেয়ে জীবন যাপন করতে হয়। তিনি আরো বলেন, এই কিছুদিন আগে আমাদের কপোতাক্ষ নদের হরিণ খোলা গ্রামের বেড়িবাঁধ ধস নেমেছে। আমরা এই নিয়ে খুব আতঙ্কে আছি। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জীব সরকার বলেন, মে মাস আসলে প্রতিদিন খবর শুনি আবার দুর্যোগ আসছে কিনা। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের বসত বাড়িতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কয়রা নদের চরের বাসিন্দা আন্না খাতুন বলেন, প্রতিবছর এই মে মাসে বিভিন্ন ঝড়ঝামটা আসে। আমরা নদের চরে থাকি। আমাদের ঘর ভেঙে যয়। আবার কষ্ট করে ঠিক করি।

মহেশ্বরীপুর গ্রামের বাসিন্দা এবাদুল শিকারি বলেন, মে মাসে খুব ভয় হয়। বিভিন্ন দুর্যোগে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখনো সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, আমাদের বাড়ির সামনের বেড়িবাঁধটা ঠিক করলে রাতে একটু ঘুম পাড়তে পারতাম। খিরোল গ্রামের মো. লিটন বলেন, আমরা ত্রাণ চাই না। টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। একই কথা বলেন, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, আমাদের কয়রা উপজেলার যে সকল দুর্বল বেড়িবাঁধ রয়েছে এ সকল বেড়িবাধগুলো দ্রুত ঠিক করতে হবে। তাহলে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে কয়রাবাসী রেহাই পাবে। তিনি দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ওখানে আমাদের কাজ করা হচ্ছে। পুরো থানার দেড় কিলোমিটারের মতো কাজ অলরেডি আমরা টেন্ডার করেছি। এ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আমরা রিসিভ করবো। ঠিকাদার এ মাসেই মাঠে নেমে যাবে। এর মধ্যে যদি সমস্যা মনে হয় তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবো। আমাদের কাছে যে বাধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে সেগুলো আমরা টেন্ডার করে ওয়ার্কশীট দিয়েছি। এসপ্তাহের মধ্যে ঠিকাদার মাঠে চলে যাবে। তিনি আরো বলেন, এর বাইরে যে জায়গাগুলো নিচু মতো আছে সেগুলো আমাদের মনিটরিং চলছে।