দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে চলতি বছরও ভারতে ইলিশ রফতানির আলোচনা চলছে। তার আগেই একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। কাঁচাবাজারের পরিবর্তে হিম শীতল ঘরে ককসীটের মধ্যে জমাট বেঁধে আছে ইলিশ। ফলে স্থানীয় কাঁচাবাজারে সরবরাহ কমেছে। বাজারে ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এক সাইজের মূল্য দুই হাজার ৪৫০ টাকা। উপহারের এ পণ্যের জন্য ভারতের সাথে চুক্তি কেজি প্রতি সাড়ে ১২ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৫২৫ টাকা।
রফতানির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের আবেদনের শেষ সময় ছিল ১১ সেপ্টেম্বর। ইলিশ উৎপাদন কেন্দ্র বলেশ^র, কীত্তনখোলা নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মিলছে না। আষাঢ়-আশি^ন মওসুম। মওসুমের তিন মাস পার হলেও ইলিশের দেখা মিলছেনা। স্থানীয় জেলেদের ভাষ্য সূক্ষ্ণ জালে মাছ ধরা, সাগর মোহনায় জেগে ওঠা চর, শৈত্য প্রবাহ, দাবদাহ ও বেপরোয়া ফিশিং ট্রলির চলাচলের জন্য উৎপাদন কমেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, জাটকা নিধনের কারণে ইলিশের উৎপাদন কমেছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, গত মওসুমের তুলনায় এবারের জুলাই মাসে ৩৭ শতাংশ ও আগস্ট মাসে ৪৭ শতাংশ ইলিশ আহরণ কম হয়েছে। ভারত সরকারের বারবার অনুরোধের কারণে সৌজন্যবোধ থেকে এবারে এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি হচ্ছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে দুর্গোৎসবের সূচনা হচ্ছে। সৌদিসহ অন্যান্য দেশে ১১ হাজার মেট্রিক টন রফতানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গেল পূজায় এ অঞ্চলের লাকি এন্টারপ্রাইজ, আঁচল এন্টারপ্রাইজ, রূপালি সী পোর্টসহ ২০টি প্রতিষ্ঠান রফতানির অনুমতি পায়। খুলনাস্থ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের রেকর্ড অনুযায়ী গেল বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ৯৪ মেট্রিক টন রফতানি হয়। রুট ছিল বেনাপোল স্থলবন্দর। বিএফডিসি খুলনার ব্যবস্থাপক জানান, কাঙ্খিত ইলিশ না পাওয়ায় রফতানিকারকরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি।
বরিশালের ইলিশ ব্যবসায়ী জহির শিকদার হতাশার সাথে বলেন, রোববার এ মোকামে ৩শ’ মন ইলিশও আসেনি। মৎস্য ট্রলার মালিক স্টেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরির অভিমত, সূক্ষ্ম জালে রেণু মারা যাওয়ায় এর উৎপাদন কমে গেছে।
খুলনাস্থ থানার মোড়ের মাছ ব্যবসায়ী ইয়ার আলী জানান, সোমবার এক কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার ৪৫০ টাকা, আড়াইশ’ গ্রাম সাইজের প্রতি কেজির মূল্য সাড়ে ৮শ’ টাকা এবং দুইশ’ গ্রাম সাইজের প্রতি কেজির মূল্য ৬শ’ ৫০ টাকা। ছোট সাইজের কেজি প্রতি ৫০ টাকা, মাঝারি সাইজ ও এক কেজি ওজনের মাছের মূল্য ১শ’ টাকা করে বেড়েছে। বড় সাইজের মাছের সরবরাহ কম। এমাসের প্রথম দিকে প্রতিদিন গড়ে এক মণ থেকে দেড় মণ বিক্রি হলেও গতকালের বাজার ছিল অর্ধেক।
স্থানীয় একটি ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র তথ্য দিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, জাটকা নিধন এবং সূক্ষ্ম জালের ব্যবহারের কারণে যেমন উৎপাদন কমেছে তেমনি সময় ও সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। এবারও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে কাক্সিক্ষত ইলিশ রফতানি হবে না। কারণ ব্যবসায়ীরা লোকসান দিয়ে রফতানির পক্ষপাতি নয়।