শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৫ উপলক্ষে গাজীপুর জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। জেলার ৩৬০ টি পূজা মন্ডপের মধ্যে প্রতিটিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি, মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ এবং সাদা পোশাকের সদস্যরা মাঠে থাকবেন।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার, গাজীপুর ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, এটি সার্বজনীন উৎসব। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণ রয়েছে। আমরা চাই পূজা হোক আনন্দ-সম্প্রীতির প্রতীক, কেউ যেন অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে। গুজব কিংবা অপপ্রচারের মাধ্যমে কেউ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গুজব প্রতিরোধে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি আরও বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যেন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা বা উসকানিমূলক তথ্য ছড়াতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সাংবাদিকরা যদি মাঠপর্যায়ে কোনো ভ্রান্ত তথ্য বা অপতৎপরতা খুঁজে পান, তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।”

পুলিশ সুপার জানান, পূজামণ্ডপগুলোতে পর্যায়ক্রমে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ মণ্ডপ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে, বাকি মণ্ডপগুলোও ধাপে ধাপে কভার করা হবে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হবে, যাতে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

গাজীপুরে পুলিশের সম্ভাব্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান অনুযায়ী— বিট ভিত্তিক হোন্ডা মোবাইল থাকবে ৪৮টি (দুই পালায় ৯৬টি), এতে দায়িত্বে থাকবেন ১৯২ জন সদস্য। গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে নিরাপত্তায় দুই পালায় ৪৮ জন পুলিশ মোতায়েন থাকবে। জেলার ৩টি ইসকন মন্দিরে থাকবেন অতিরিক্ত ১৫ জন। এ ছাড়া মোবাইল ডিউটি থাকবে ৪৫টি (দুই পালায় ৯০টি) যেখানে নিয়োজিত থাকবেন ৪৫০ জন। স্ট্রাইকিং ডিউটি থাকবে ৫টি (দুই পালায় ১০টি) যেখানে দায়িত্বে থাকবেন ১০০ জন এবং স্ট্যান্ডবাই ডিউটি থাকবে ৫টি (দুই পালায় ১০টি) যেখানে আরও ১০০ জন প্রস্তুত থাকবেন। পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্বে থাকবেন ৪০ জন পুলিশ সদস্য। সব মিলিয়ে মোট ৯৪৫ জন অফিসার-ফোর্স পূজার নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকবেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আশরাকুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোঃ আমিনুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মাহবুবুর রহমান।

পুলিশ সুপার শেষে গাজীপুরবাসীর উদ্দেশে বলেন—“ধর্মীয় উৎসব মানুষকে কাছাকাছি আনে, বিভক্ত নয় বরং ঐক্যবদ্ধ করে। তাই সবাইকে আহ্বান জানাই—আপনারা যার যার অবস্থান থেকে সম্প্রীতি ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সর্বদা আপনাদের পাশে রয়েছে।”