পাবনা সংবাদদাতা : পাবনার ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়ায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন স্থানীয় দুই টেলিভিশন সাংবাদিক-ে প্রেসক্লাব পাবনার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি হুজ্জাতুল্লাহ হীরা ও মাই টিভির ঈশ্বরদী প্রতিনিধি আলিফ হাসান। তারা আন্দোলনের বিভিন্ন মুহূর্তের ভিডিওধারণ করে নিয়মিতভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়াও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরবরাহ করছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৪ আগস্ট দাশুড়িয়া মোড়ে চলমান এক বৈষম্যবিরোধী ছাত্রমিছিলে হামলার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে তারা অতর্কিত আক্রমণের শিকার হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একদল আওয়ামী কর্মী প্রথমে তাদের ক্যামেরা ও স্ট্যান্ড ভাঙচুর করে এবং পরে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যাচেষ্টাও চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়দের সহায়তায় দু’জনকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
আহতদের একজন হুজ্জাতুল্লাহ হীরা বলেন, “জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করেছি। এখনো পুরোপুরি সুস্থ নই। অথচ আমাদের স্বীকৃতি দেওয়া হলো না- এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
আলিফ হাসান বলেন, “যারা আন্দোলনে অংশই নেয়নি, তাদের নাম গেজেটে থাকলেও আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা যেন আরেকবার বৈষম্যের শিকার হওয়া।”
সাংবাদিকদের এই অবমূল্যায়নের বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন সমাজ বিশ্লেষক ড. আসলাম হোসেন। তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা সর্বজনবিদিত। এভাবে আহত হওয়ার পরও তাদের নাম না থাকা চরম বৈষম্যের উদাহরণ। বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন,”আহতদের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল। গেজেটে নাম না থাকাটা দুঃখজনক। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের পাশে আছি।”
এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও পাবনা জেলা জামায়াতের আমীর। অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল বলেন,
“দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিকরা আজ অবহেলিত। এটা শুধু একটি ব্যক্তিগত অবমাননা নয়, বরং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
হামলার মামলার আসামীরা জামিনে মুক্ত হয়ে মামলাটি তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন আহত হীরার ছোট ভাই সোলায়মান। তিনি জানান, “আমাকে মুলাডুলি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতির ছেলে মেহেদীর নেতৃত্বে একদল আওয়ামী সন্ত্রাসী মারধর করে মোবাইল কেড়ে নেয়। এখন আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
সচেতন মহলের মতে, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়া সাংবাদিকদের সরকারিভাবে গেজেট স্বীকৃতি না দেওয়া মানে তাদের দ্বিতীয়বার বৈষম্যের শিকার করা। দ্রুত তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির দাবিও উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।