খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) একাডেমিক কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল বুধবার সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় মঙ্গলবারের হামলায় জড়িতদের বহিষ্কার, বহিরাগতের বিরুদ্ধে মামলা, আহতদের চিকিৎসা খরচসহ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে ভিসির পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে কুয়েটের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। কুয়েট ভিসি এখনো অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সকাল থেকেই অনেক শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করেছে। ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে যারা ভাড়া রয়েছেন তাদের ভিতর চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা রয়েছেন উদ্বিগ্ন। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ঘিরে মঙ্গলবার ছাত্রদল ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে আহত হন উপাচার্যসহ শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের অধিকাংশের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে পাঁচজনকে।
বুধবার সকাল থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের চারপাশে অবস্থান নেয় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। ভেতরে মেডিকেল সেন্টারের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। মেডিকেল সেন্টারের দোতলায় ভিসি অবরুদ্ধ ছিলেন। এদিকে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি’র সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করা হয়েছে।
কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে আল্টিমেটাম দেয় শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর একটার মধ্যে দাবি পূরণ না হলে কুয়েটের সকল প্রকার ক্লাস, পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তারা।
এদিকে ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮ তম নিয়মিত সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত করে বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ মেডিকেল সেন্টার অবরুদ্ধ থাকায় অনলাইনে তিনি সিন্ডিকেট সভায় যোগ দেন।
খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন জানান, কুয়েটে ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (নর্থ) মো. নাজমুল হাসান রাজীব বলেন, ‘‘সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকৃকতরা হলো-আব্দুল করিম মোল্লা (৫৫), মো. আনোয়ার হোসেন (২০), মো. ইব্রাহিম (১৯) মো. শফিকুল (২৩) ও ইয়াসিন আরাফাত (১২)। তবে, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। ক্যাম্পাসের গেটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’’
এদিকে বিশ^বিদ্যালযের ৯৮ তম সিন্ডিকেটের সভায় সংঘর্ষের ঘটনায় চার সদস্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সভাপতি প্রফেসর ড. এম এ হাশেম ও সদস্য সচিব শাহ মো. আজমত উল্লাহ, সদস্য প্রফেসর মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, সদস্য প্রফেসর ড. আবু জাকির মোর্শেদ । তাদেরকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। সভায় বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন মামলা দায়ের করবেন। জড়িত শিক্ষার্থীকে বিশ^বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ১১ আগস্ট ৯৩তম সিন্ডিগেটের সভায় রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের আদেশটি বহাল থাকবে। অর্থাৎ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষিার্থীরা রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না। একইভাবে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা থাকতে পারবে না। জড়িত থাকলে চাকরিচ্যুতসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বিভাগীয় কমিশনারের তত্ত্বাবধায়নে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয়ভার বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ধারালো অস্ত্র হাতে সেই যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান বহিস্কার : কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে অবস্থান নেয়া খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমানাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দের কোন অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নিবেনা। এতে যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তার সাথে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।
কুয়েটে হামলা ও উস্কানিতে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি ছাত্রদলের : গতকাল বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে কুয়েটে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কুয়েট শাখা ছাত্রদল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে (কুয়েট)- একটি চরম অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় মারাত্মকভাবে হতাহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সরেজমিনে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এসেছি। তারা আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করার সাথে সাথে উক্ত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানান এবং এসব ন্যক্কারজনক হামলাতে ও এসবের উস্কানিতে জড়িত যেই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক তাদের সকলকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
২৪ ঘণ্টা পর মুক্ত কুয়েট ভিসি : অবরুদ্ধের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর কুয়েটের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাছুদ মুক্ত হয়েছেন। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে কুয়েট মেডিকেল সেন্টার থেকে তিনি মুক্ত হন।
এদিকে কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি ও ছাত্রবিষয়ক পরিচালককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা প্রশাসকশূন্য ঘোষণা করেন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করছে। ফলে তারা কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
কুয়েটের সাবেক ভিসি আলমগীরসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে মরধরের অভিযোগে সাবেক ভিসি এবং দৌলতপুর থানার সাবেক ওসিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে। রোববার মহানগর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মো. রাকিবুল ইসলাম অভিযোগটি গ্রহণ করে মামলা হিসেবে রেকর্ড করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য খানজাহান আলী থানাকে নিদের্শ দিয়েছেন।
দুই মামলার আসামীরা হলেন, কুয়েটের সাবেক ভিসি আলমগীর হোসেন। এছাড়া তৎকালীন প্রফেসর মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ড. সোবহান মিয়া, সাবেক রেজিস্টার জি এম শহীদুল ইসলাম, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাফায়েত হোসেন নয়ন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ও সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আলী ইমতিয়াজ সোহান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ও লালন শাহ হলের সাবেক ছাত্রলীগ কমী মো: আসাদুজ্জামান, আ,ই,এম ডিপার্টমেন্ট রুদ্রনীল সিংহ শুভ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ও লালন শাহ হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আল ইশমাম, আই ই এম ডিপার্টমেন্ট’৯ এইচ এম তানভীর রেজওয়ান সিদ্দিক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ও লালন শাহ হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী রেশাদ রহমান, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপামেন্ট ও লালন শাহ হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মি তরিকুল তিলক, পরিমল কুমার, আলী ইবনুল সনি, তারিক আহমেদ শ্রাবণ, দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদীরা হলেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ ও বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্র। তারা নিয়মিত নামাজ কালাম পড়তেন।
বাদী মাহদী হাসান তার এজাহারে উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু হলে থাকতেন তিনি। ২০১৭ সালের ১ মে রাত পৌণে ১২ টার দিকে ১৫ তম ব্যাচের ছাত্র তাশরিফ সালেহ (রাহুল) ও মাশরুর আলম কৌশিকসহ আরও পাঁচজন দরজার কড়া নাড়তে থাকে। ঘুম থেকে দরজা খুলে দিলে তারা ডেকে নিয়ে হলের গেষ্ট রুমে ডেকে নেয় তাকে। সেখানে গিয়ে আরও দু’জন নাইম ও রুম্মনকে ধরে আনা হয়। নাইম ও রুম্মনের সাথে তিনি দৌলতপুর একটি কোচিং সেন্টারে একসাথে পড়াশুনা করত। পরে জানতে পারেন ওই কোচিং সেন্টারের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার নাম দৌলতপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন শিবির সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার জি এম শহীদুলের কাছে জমা দিয়েছে।
তখন রেজিস্ট্রার জি এম শহীদুল ইসলাম, সাবেক ভিসি ড. মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ও ছাত্র কল্যাণ সম্পাদক ড. সোবাহন মিয়া পরামর্শ করে মাহদী হাসানসহ তালিকায় ছাত্রদের নির্যাতন করার জন্য ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত হোসেন নয়ন এবং আলী ইমতিয়াজ সোহানকে তালিকা প্রদান এবং নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলায় আরো বলা হয়, গেস্টরুমে মাহাদীকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নাইমকে কিভাবে চিনি বলে। এর পরপরই শুরু হয় নির্যাতন। আসামি সাদমান নাহিয়ান সেজান কিল এবং ঘুসি মারতে থাকে। পরবর্তীতে লাঠি, স্টাম্প এবং রড় দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করতে থাকে। তাদের আঘাতে বাদী অজ্ঞান হয়ে পড়লে মৃত ভেবে আসামীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে সাবেক ভিসি ও সাবেক রেজিষ্ট্রারের নির্দেশে খানজাহান আলী থানার পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায় এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা নাশকতা মামলা দায়ের করে।
অপর মামলার বাদী লুৎফর রহমান, লালন শাহ হলের ছাত্র ছিলেন। এজাহারে উল্লেখ করেন, সাব্বির নামে একজন রুমমেট ছিল তার। তিনি রাজনৈতিক মামলায় দৌলতপুর একটি কোচিং সেন্টার থেকে গ্রেফতার হন। পরে তিনি জানতে পারেন ওই কোচিংয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার নাম থানার ওসি কুয়েট রেজিস্ট্রারের নিকট জমা দিয়েছেন। ওসির দেওয়া তালিকার ছাত্রদের নির্যাতন করার জন্য সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি সাফায়েত হোসেন নয়নকে তালিকা সরবরাহ এবং নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলায় আরো বলা হয়- ২০১৭ সালের ১ মে রাত ১০ টার দিকে তাকে কুয়েট লালন শাহ হলে ডেকে নেওয়া হয়। আসামী সাফায়েত হোসেন নয়ন বাদীকে বলে তুমি শিবির কর। অস্বীকার করার সাথে সাথে অপর আসামী আলী ইমতিয়াজ সোহান তার গালে চড়, ঘুষি এবং কিল মারতে থাকে। নির্যাতন রাত ৪ টা পর্যন্ত চলতে থাকে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম লিটন বলেন, কুয়েটের হলের গেস্ট রুমগুলো ছাত্রলীগের টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হত। ছাত্রলীগের মতের বিরুদ্ধে গেলে তাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসত। তিনি আরো বলেন, বাদী মাহদী ও লুৎফর নিয়মিত নামাজ কালাম আদায় করত। ছাত্রলীগ সদস্যদের মতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় ছাত্র শিবির আখ্যায়িত করে সেদিন তাদের অমানবিক নির্যতন করা হয়েছিল। পুলিশ তাদের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছে। তাদের আঘাতে বাদী লুৎফর রহমানের একটি কিডনী নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে। তিনি আরও বলেন, রোববার তারা দু’জন আদালতে অভিযোগ করেছেন। আদালত তাদের অভিযোগ দু’টি গ্রহণ করে মামলা রেকর্ড করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য খানজাহান আলী থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।