সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় গেল চার আগস্ট ছাত্র—জনতার আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ মানিক, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তালুকদারসহ পাঁচজনের জামিন না-মঞ্জর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে সুনামগঞ্জের সিনিয়ির জেলা ও দায়রা জজ মো: হেমায়েত উদ্দিন এই আদেশ দেন। আদালতের পিপি মল্লিক মো: মইন উদ্দীন আহমদ সোহেল আওয়ামী লীগের নেতাদের জামিন না মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গেল চার আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদরে আন্দোলকারী ছাত্র—জনতার ওপর ব্যাপক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত উপজেলার ছাড়ারকোনা গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল হাসান বাদী হয়ে ৯৭ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করে আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বম্ভরপুর আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন। এই মামলার আসামী আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম তালুকদার, বেনজির আহমদ মানিক, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক খালেদ মাহমুদ তালুকদার, সংগঠনের নেতা উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী তপন এবং আনোয়ার হোসেন সোমবার আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করেন।
জামিন শুনানীকালে বাদীপক্ষের আইনজীবী জেলা বারের সভাপতি অ্যাড. আব্দুল হক বললেন, আমরা আদালতকে জানিয়েছি গেল চার আগস্ট রফিকুল ইসলাম তালুকদারসহ আসামীরা আন্দোলনকারীদের উপর সশস্ত্র হামলা করেছে। আন্দোলনকারী এমনকি স্কুলের শিক্ষার্থীরা সাঁতার কেটে নদী পাড় হতেও পারে নি। হাসপাতালে গিয়েও রক্ষা পায় নি। তাদেরকে জামিন দিলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মাসুক আলম বললেন, চার আগস্টে রফিকুল ইসলামের হাতে অস্ত্র ছিল। শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র হামলার ছবি ভাইরাল হয়েছে। বিগত সরকারের শাসনামলে এরা কয়েকজনের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিল বিশ্বম্ভরপুরের মানুষ। পরিবর্তীত এই পরিস্থিতি না হলে. হয়তো সাধারণ মানুষসহ আমরা অনেকেই জেলে থাকতাম। এসব বিষয় বিবেচনা করে তাদের জামিন নামঞ্জুর করার অনুরোধ জানান তিনি।
আসামীপক্ষের আইনজীবী সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারী অ্যাড. নূরে আলম সিদ্দিকী উজ্জ্বল বললেন, আমরা আদালতকে বলেছি। আসামীরা নির্দোষ, নিরপরাধ। কথিত মামলায় গুরুতর কোন অভিযোগ নেই তাদের কিরুদ্ধে। শুনানী শেষে সার্বিক বিবেচনায় আদালত জামিন না মঞ্জুর করেছেন। আশাকরছি আগামী তারিখে এই আদালতেই আমরা ন্যায় বিচার পাবো।
বেলা ১১টায় আওয়ামীলীগের হেবিওয়েট এই নেতাদের জামিন শুনানীর সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক হট্টগোল শুরু হলে বিজ্ঞ বিচার আদালতের কাযক্রম সাময়িক বন্ধ রাখেন। পরবর্তীতে বিকাল ৪টায় আবার কাযক্রম শুরু হলে দীর্ঘ শুনানী শেষে আসামীদের জামিন না-মঞ্জুরক্রমে জেল হাজতে প্রেরনের আদেশ প্রদান করেন।