নোয়াখালী সংবাদদাতা : নোয়াখালীর হাতিয়ায় মে মাসের বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে জোয়ারে বেড়িবাঁধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় এক-তৃতীয়াংশ বাঁধ ভেঙে গেছে। সম্পূর্ণ বেড়িবাঁধটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে স্বাভাবিক জোয়ারে এটি ভেঙে যেতে পারে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙা অংশটুকু মেরামত না করলে ক্ষতির মুখে পড়বে বেড়িবাঁধের ভেতরের বসবাস করা প্রায় বিশ হাজার পরিবার।

সাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের ফলে গত মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত স্বাভাবিকের তুলনায় ৩/৪ ফুট উচ্চতায় জোয়ার হয়। সঙ্গে প্রচ- ঝড়ো বাতাস ছিল। পূর্ব দিক থেকে ৩/৪ ফুট উচ্চতার জোয়ারের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চরঈশ্বর ইউনিয়নের নলচিরা ঘাট থেকে বাংলা বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রায় অর্ধেক।

স্থানীয় আমজাদ, মাহমুদের সাথে এই প্রতিবেদক কথা জেনেছেন যে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে গত বছর ৪ কিলোমিটার এই বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হয়।

এতে চরঈশ্বর ইউনিয়নের তালুকদার গ্রাম, বাদশা মিয়া হাজি গ্রাম, ৭ নং গ্রাম, হামিদুল্লাহ গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় থেকে নিরাপদ ছিল।

বেড়িবাঁধ নির্মাণে এসব গ্রামে বেড়েছে ফসলি জমি, মাছের প্রজেক্ট ও পুকুর। কিন্তু প্রচ- জোয়ারে বেড়িবাঁধটি প্রায় ২ কিলোমিটারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ।

এরই মধ্যে সামনে বর্ষাকাল, সে সময় সাগর আরও বেশি উত্তাল থাকবে, জোয়ারের উচ্চতাও বাড়বে কয়েক গুণ। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি মেরামত না করলে চর ঈশ্বর ইউনিয়নের বেশিরভাগ অংশই সাগরে বিলীন হয়ে যাবে।

এছাড়াও উপজেলার সর্বপশ্চিমে বিচ্ছিন্ন নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের একমাত্র মেইন রোডটিও প্রচন্ড জোয়ারের পানিতে ব্যপক ক্ষতি সাধন হয়।

স্থানীয় আজগর আলী, রবিন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান “ নামার বাজার যাওয়ার পথে বন্দরটিলা বাজারের একটু পরে, এবারের প্রবল বন্যার স্রোতে রাস্তাটা পুরো ভেঙে গেছে” ।

রোডের এই অবস্থার কারণে নিঝুমদ্বীপের এক প্রান্তের সাথে আরেক প্রান্তের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অতিদ্রুত এই রোড সংস্কার করে ঠিক না করলে ঘাট থেকে নামার বাজার যাওয়াটা কোনোভাবেই সম্ভব হবেনা।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, হাতিয়ায় সবচেয়ে বেশি বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চরঈশ্বর ইউনিয়নের পূর্ব পাশে। এছাড়া নিঝুম দ্বীপ, নলচিরা ও সূখচর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ অনেক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো মেরামতে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।

মাধবদীতে কুরবানির পশুর হাট জমজমাট

মো. আল আমিন, মাধবদী (নরসিংদী) ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। এরইমধ্যে মাধবদীতে জমজমাট হয়ে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতে সরগরম মাধবদী ও এর আশপাশের বিভিন্ন পশুর হাটগুলো। ক্রেতাদের পাশাপাশি ভিড় জমাচ্ছেন দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা। এবারো বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদাই বেশি। তবে দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিক্রেতারা জানান, পশুর হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরু কেউ কিনতে চাইছেন না। বড় আকারের গরুর ক্রেতা কম থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিক্রেতেরা। এছাড়াও হাটগুলোতে গরুর সরবরাহ বেশি হওয়ায় খরচের তুলনায় তেমন দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তারা। এতে শঙ্কায় খামারিরা ও প্রান্তিক চাষিরা। ক্রেতারা জানান, ঈদের এখনো বেশ কয়েকদিন বাকি আছে। এখন গরু কিনলে বাড়িতে রেখে লালন-পালন কষ্টসাধ্য। ঈদের দু-একদিন আগে গরু কিনলে বাড়িতে রাখা সহজ হবে। তাই শেষ দিকে গরু কেনার অপেক্ষায় আছেন তারা। তবে গতবারের চেয়ে গরুর দাম বেশি বলে দাবি ক্রেতাদের।

একটি সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এ বছর জেলায় ছোট-বড় বহু খামারে দেশীয়, অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গবাদিপশু লালনপালন করা হয়েছে। এসব গরু বেচাকেনার জন্য জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী এলাকা এলাকায় বহু হাট বসানো হয়েছে। এছাড়াও উদ্বৃত্ত পশু ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করবেন।

জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট শিবপুরের পুটিয়া হাটে ও মাধবদীর সবচেয়ে বড় হাট সোমবার মাধবদী গরুরহাট ঘুরে দেখা যায়, রোববার রাত থেকেই এসব হাটে বিভিন্ন জাতের ও আকারের গরু নিয়ে আসতে শুরু করেন খামারিরা, প্রান্তিক চাষি ও ব্যাপারীরা। দুপুর ২টার পর থেকে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় হাটগুলো। এরপর ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতে সরগরম হয়ে উঠে। হাটগুলোতে ক্রেতারা আসছে, দেখছেন, ঘুরছেন দরদাম করে কিনছেন পছন্দের পশু। তবে ভারতীয় গরু না থাকায় দেশীয় গরুর চাহিদায় বেশি। ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। এসব হাটে ক্রেতাদের পাশাপাশি ভিড় জমাচ্ছেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বড় ব্যবসায়ীরা। তবে দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে।