কুষ্টিয়া জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ হরেক রকম শীতকালীন আগাম সবজিতে ভরে গেছে। চাষ হচ্ছে ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, গাজর, লাউ, সিম, করলা, টমেটোসহ নানান আগাম শীতের সবজি। ভালো দাম পেয়ে চাষীরা বেশ খুশি। বাড়ছে সবজী চাষীর সংখ্যাও। তবে খরচ বেড়ে যাওয়ার অভিযোগও রযেছে অনেকের। ভোর হলেই কৃষকরা ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আবার কেউ ফসল বিক্রির জন্য ছোটে আড়তে। অবশ্য পাইকারী ব্যাপারীও অনেক সময় ছুটে আসে মাঠে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ধলনগর গ্রামের কৃষক মোহন হোসেন ৩৬ শতাংশ জমিতে আগাম ফুলকপি চাষ করেছে। এই চাষি বলেন, আগাম জাতের সবজি হওয়ায় দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি ফুলকপি ১২০ টাকা ও বাধাকপি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঠের এক লাউ চাষি জানান, এক বিঘা জমিতে লাউ লাগিয়েছি। প্রতিদিনই ২/৩শ পিস লাউ উত্তোলন করছি। প্রতি পিস লাউ ৩০-৩৫ টাকায় পাইকারি বিক্রি করি। এতে লাভ ভালোই হচ্ছে। তবে শিম চাষি জুয়েল রানা বলেন, সার-বিষের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। আবহাওয়া অনূকুলে না থাকায় সবজিতে বেশি পরিমাণে সার ও বিষ স্প্রে করা হচ্ছে। প্রতি কেজি শিম বাজারে পাইকারি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, চলতি বছর জেলার ছয় উপজেলার সদরে ১হাজার ৯৫০ হেক্টর, দৌলতপুরে ৬৪৫ হেক্টর, ভেড়ামারায় ৬৩০ হেক্টর, মিরপুরে ৬০৩ হেক্টর, খোকসায় ১৩৯ হেক্টর এবং কুমারখালীতে ৭৩৬ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে।
জেলায় সবজি উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুমারখালী। এউপজেলার ধলনগর গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক ৪৯ শতাংশ জমিতে লিডার জাতের করলার চাষ করেছে। সে জানায়, গত দুই মাসে দেড়শ মণ করলা তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচে চলতি মৌসুমে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকার করলা বিক্রির আশা তার। ওমর ফারুক বলেন, চারা রোপণের ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মাথায় করলা ধরতে শুরু করে। তখন প্রতিদিন আট থেকে ৯ মণ করে করলা পাইকারি ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। জমির ইজারা, বীজ, সার, পরিচর্চাসহ এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচে তিন মাসে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা লাভ হবে।
যদুবয়রা ইউনিয়নের হাঁসদিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, আগে কলা চাষ করতাম। এতে খরচ, কষ্ট ও ঝুঁকি বেশি, কিন্তু লাভ কম। সে জন্য কয়েক বছর ধরে লালশাক চাষ করছি। দেড় মাসে এক হাজার ২শ জোড়া শাক ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। শাক থেকে প্রতি মাস অন্তর প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়।
মিরপুর গ্রামের কৃষক গোলাম রসুল বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে ১০ শতাংশ জমিতে করলার চাষ করেছি। সপ্তাহখানেক পরেই বাজারে তোলা হবে। ১২ হাজার টাকা খরচে প্রায় ৬০ মণ করলা উঠবে, যার বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকা।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আধুনিক মালচিং পদ্ধতিতে লাউ, করলা, ঝিঙা, ফুলকপি, মুলা, লালশাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ করা হয়েছে। মালচিং পদ্ধতির বিষয়ে কৃষকরা বলেন, এই পদ্ধতিতে গাছের গোড়ায় বা সবজি ক্ষেতে খড়, পাতা, ঘাস বা প্লাস্টিক শিটের মতো বিভিন্ন উপাদান দিয়ে মাটির ওপরের অংশ ঢেকে দেওয়া হয়। এর মূল উদ্দেশ্য মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা, আগাছা দমন করা, মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা।
উৎপাদিত সবজি পাইকারি বিক্রির জন্য কুমারখালী পৌরসভা এবং পান্টি তহবাজারে অন্তত ১৪টি আড়ত রয়েছে। এ ছাড়া কুষ্টিয়া সদর ও খোকসা উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহের শৈলকুপা, রাজবাড়ীর পাংশা ও পাবনা সদরের আড়তগুলোতে কৃষকরা সরাসরি বিক্রি করেন। আবার স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীরাও ভ্যান ও তিন চাকার গাড়িতে সরাসরি মাঠে গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনেন।
পান্টি তহবাজারের আড়তদার মিলন হোসেন বলেন, বাজারে তিনটি আড়ত আছে। সেখানে প্রতিদিন ১৫ হাজার কেজি সবজি বেচাকেনা হয়, যার বাজারমূল্য আট থেকে ১০ লাখ টাকা।
কুমারখালী তহবাজারের আসাদুল ইসলাম বলেন, গত শনিবারেও ১ হাজার ৭০০ কেজি সবজি কেনাবেচা করেছি। এখানে ১১জন আড়তদার আছে। সব মিলে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ হাজার কেজি সবজি বেচাকেনা হয়, যার বাজারমূল্য ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।
কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম এব্যাপারে জানান, এ বছর ৭৩৬ হেক্টর জমিতে ১৭ হাজার টন আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। আমরা সব সময় কৃষকদের সহযোগীতা করছি।