দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। বুধবার থেকেই গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করে। এতে রান্নাসহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছে না সাধারণ মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) গত দুইদিন ধরে এলএনজি কার্গো জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হয়নি। এর ফলে জাতীয় গ্রিডে আরএলএনজি (রি-গ্যাসিফাইড লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা ঝর্না আক্তার বলেন, গ্যাস নেই। রান্না করতে পারছি না। আগে তো টুকটাক সমস্যা হতো। এখন একেবারেই গ্যাস পাচ্ছি না৷। জানি না কখন গ্যাস পাবো। বাধ্য হয়ে হিটারে রান্না করেছি।
একই সমস্যার কথা জানান ধানমন্ডি সেনট্রাল রোডে বাসিন্দা বিথীকা । তিনি জানান, দুই দিন ধরে গ্যাস সংকট বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দুর্ভোগ বেড়েছে।
এর আগে, বৃধবার পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, বৈরী পরিস্থিতিতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে আবারও এলএনজি কার্গো জাহাজ এফএসআরইউতে ভেড়ানো সম্ভব হবে।
পেট্রোবাংলা জানায়, মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত এফএসআরইউতে (ভাসমান স্টোরেজ ও রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) গতকাল ও আজ এলএনজি কার্গো বার্থিং (জাহাজ ভেড়ানো) করতে না পারায় জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সেন্ড আউট (গ্যাস সরবরাহ) ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
এর ফলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি অধিভুক্ত এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করছে।
আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের খাজা রোড এলাকার বাসিন্দা রুবি আক্তারের বাসায় বৃহস্পতিবার দুপুরে রান্না হয়নি। বুধবার সন্ধ্যা থেকেই তাঁদের বাসায় গ্যাস নেই।
বেলা দুইটার দিকে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। দুপুরে হোটেল থেকে খাবার এনে খেয়েছেন। রাতেও গ্যাস না এলে একই অবস্থা হবে।
শুধু রুবি আক্তার নন, চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নগরের ফিলিং স্টেশনগুলোয়ও গ্যাস নেই। এতে গ্যাসের জন্য যানবাহনের লম্বা লাইন দেখা গেছে। মূলত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালে দুই দিন ধরে গ্যাসবাহী জাহাজ ভিড়তে পারছে না। এ কারণে চট্টগ্রামসহ জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
আমদানি করা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। একটি মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। অন্যটি সামিট এলএনজি টার্মিনাল। এই দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে দিনে প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়। টার্মিনাল থেকে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।
গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়ে কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক শফিউদ্দিন মো. ফরহাদ ওমর বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত দুই দিন দুটি টার্মিনালে কার্গো ভিড়তে পারেনি। তবে আজ সকালে সামিট এলএনজি টার্মিনালে একটি কার্গো যুক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। শফিউদ্দিন মো. ফরহাদ ওমর জানান, দুটি টার্মিনালে ১৮০ থেকে ১৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। সব গ্যাসই আসছে চট্টগ্রামে। ঢাকায় কোনো গ্যাস যাচ্ছে না।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় আপাতত আনা যাচ্ছে না। তবে এরই মধ্যে একটি কার্গো টার্মিনালে ভিড়তে পেরেছে।
সন্ধ্যার মধ্যেই গ্যাসের চাপ বেড়ে যাবে। আরেকটি কার্গো সন্ধ্যায় যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আজকের মধ্যেই গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
গ্রাহক ও কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর, পাহাড়তলী, আগ্রাবাদ, চটেশ্বরী, লালখান বাজার, জামালখান, চেরাগীপাহাড়, আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো গ্যাস নেই। অন্যান্য এলাকায় গ্যাস থাকলেও চাপ একেবারে কম।
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটির মহাব্যবস্থাপক মো. শফিউল আজম খান বলেন, চট্টগ্রামে চাহিদা ২৮০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গতকাল পাওয়া গেছে ২০০ মিলিয়ন। এ কারণে শিল্প ও বাসাবাড়িতে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া নগরের ফিলিং স্টেশনেও গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তবে সার ও বিদ্যুতে গ্যাস যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার বেলা তিনটা থেকে বুধবার বেলা তিনটা পর্যন্ত কক্সবাজারে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর পর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি কিছুটা কম ছিল। ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে দুপুরের পর থেকে আবার বৃষ্টি বাড়তে থাকে। বর্তমানে সাগর প্রচন্ড উত্তাল। দমকা হাওয়া বইছে।