রাজশাহীতে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয় অভিমুখে লংমার্চ করেছে 'ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী জুলাই ৩৬ মঞ্চ'। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে হাইকমিশন কার্যালয় থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে ব্যারিকেড দিয়ে পদযাত্রাকারীদের আটকে দেয় পুলিশ। এসময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আজ সকাল থেকে হাইকমিশনের যাবতীয় দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ‘ভারতীয় আধিপত্য বিরোধী জুলাই ৩৬ মঞ্চ’ এর ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে নগরীর ভদ্রা মোড়ে জড়ো হন। পরে স্লোগান দিতে দিতে তারা পদ্মা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রা শুরু করে। সেখানে পৌঁছালে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। এসময় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে হাইকমিশন কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা গড়ে তোলা হয়। সহকারী হাইকমিশন কার্যালয় থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে দেয়া হয় ব্যারিকেড। একপর্যায়ে জুলাই ৩৬ মঞ্চের সদস্যরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এ সময় তদের ভারতবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে ‘ভারতীয় আধিপত্য বিরোধী জুলাই ৩৬ মঞ্চ’ সদস্যরা রাস্তায় জোহরের নামায আদায় করেন।

কর্মসূচির অন্যতম সমন্বয়ক সোয়েব আহমেদ বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাতে এলেও পুলিশ অন্যায়ভাবে তাদের পথ রোধ করেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তাদের এই লড়াই ন্যায়ের পক্ষে এবং এটি চলমান থাকবে। আরেক আন্দোলনকারী মিফতাহুল জান্নাত বলেন, সীমান্তে অব্যাহত হত্যাকা- এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে তারা সমবেত হয়েছেন, কিন্তু পুলিশি বাধা দিয়ে জনগণের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। মিছিলে অংশ নেয়া মহাফুজা বুশরা জানান, একটি স্বাধীন দেশে নাগরিক অধিকার রক্ষায় তারা রাজপথে নেমেছেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা পিছু হটবেন না।জুলাই ৩৬ মঞ্চের সদস্য শাহরিয়ার কবির বলেন, "ভারত আমাদের দেশের ওপর নানা ধরনের আগ্রাসন চালাচ্ছে। সীমান্তে একের পর এক হত্যাকা- ঘটছে। আমাদের নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে। খুনি হাসিনাকে তারা ভারতে আশ্রয় দিয়েছে। ওসমান হাদির খুনিদেরও ভারত আশ্রয় দিয়েছে। আমরা ভারতীয় আগ্রাসন মানি না।"

বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীর পদ্মা হাউজিং এ অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের কার্যালয় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এদিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় গতকাল সকাল থেকে আগামী দু’দিনের জন্য হাইকমিশনের যাবতীয় দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে যে সব ভিসা আবেদনকারী বৃহস্পতিবারের জন্য ‘স্লট’ বুক পেয়েছিলেন তাদের জন্য নতুন তারিখ এবং সময় নির্ধারণ করা হবে বলে জানা গেছে।

খুলনা ব্যুরো : ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের আশ্রয় এবং বাংলাদেশের ওপর অব্যাহত সন্ত্রাসবাদের প্রতিবাদে খুলনায় মার্চ টু ভারতীয় কনসুলেট অফিস কর্মসূচি পালন করেছে আধিপত্যবাদ বিরোধী ঐক্যজোট।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর রয়েল মোড় থেকে ব্যানার, ফেস্টুন হাতে মাইকে শ্লোগান দিতে দিতে মিছিলটি শুরু হয়ে নগরীর শামসুর রহমান রোডের সহকারী হাই কমিশনের দিকে যায়।

মিছিলটি সিভিল সার্জন অফিসের সামনের পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগুতে থাকলে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। সেখানে কিছু সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন সহ বেশ কয়েকজন আঘাতপ্রাপ্ত হন। এরপর নবনির্মিত কনভেনশন সেন্টারের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারীরা শ্লোগান দিতে থাকে এবং রাস্তায় বসে পড়ে। আধাঘন্টার মত সেখানে অবস্থান শেষে আবারো মিছিল নিয়ে রয়্যাল মোড়ের দিকে চলে যায় বিক্ষোভকারীরা।

শামসুর রহমান রোডে অবস্থানকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতন আন্দোলনে অকুতোভয় সেনানী শরীফ ওসমান হাদী ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এক জ্বলন্ত আগুন হিসেবে আর্বিভূত হয়েছিলেন। যে কারণে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলী চালিয়ে হামলাকারীরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। আগামীতে কাকে কাকে আঘাত করা হবে তা ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। তারা পরিকল্পিকভাবে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। বক্তারা আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বক্তব্য উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে অভিযুক্তদের ফেরত না দেওয়া হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তারা এ কর্মসূচিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি একটি ‘স্পষ্ট বার্তা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, আধিপত্যবাদবিরোধী জোটের নেতা আহম্মদ হামিম রাহাত, মিনান মুশফিক, রমজান শেখ, মিরাজ হোসেন, মোহম্মদ তন্ময়, ফয়জুল্লাহ আল শাকিল, শাম্মী ইসলাম, সাঈফ নেওয়াজ, মিরাজুল ইসলাম, মহরম হোসেন মাহিম প্রমুখ।

এর আগে দুপুরের পর থেকে সমগ্র এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সামসুর রহমান রোডে ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনের অদূরে দুটি স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে পুলিশ। নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম এই সড়কে দীর্ঘ সময় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকায় পাশ^বর্তী রাস্তাগুলোতে যানজট দেখা দেয়।

এবার রাজশাহী ও খুলনার ভিসাকেন্দ্র বন্ধ করলো নয়াদিল্লী

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের দুই বিভাগীয় শহর রাজশাহী এবং খুলনায় ভারতীয় ভিসা আবেদনকেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল নয়াদিলীø। গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দিনের জন্য এই দু’টি ভিসাকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। যে সব ভিসা আবেদনকারী বৃহস্পতিবারের জন্য ‘স্লট’ বুক করেছিলেন, তাদের জন্য নতুন তারিখ এবং সময় নির্ধারণ করা হবে। বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (আইভ্যাক)।

গত বুধবার হঠাৎই দুপুর ২টো থেকে ঢাকার ভারতীয় ভিসাকেন্দ্র বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়েছিল। যদিও বৃহস্পতিবার থেকে নির্ধারিত সময়েই ওই ভিসাকেন্দ্র চালু হয়েছে। তার আগেই বাংলাদেশের অন্য দু’টি ভিসাকেন্দ্র পুরো দিনের জন্য বন্ধ করার কথা জানায় ভারত। গত বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারও বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা সবিস্তার জানানো হয়নি। ঘটনাচক্রে, বুধবারই দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাকে তলব করেছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের একাংশের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লার ভারতবিরোধী বক্তৃতার পরিপ্রেক্ষিতেই এই তলব। সম্প্রতি হাসনাত তার বক্তৃতায় ‘সেভেন সিস্টার্স’-কে (উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য) ভারতের মানচিত্র থেকে আলাদা করে দেওয়ার ডাক দেন। শুধু তা-ই নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেওয়ার কথাও বলেন। তার পরেই ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করে ভারত সরকার। ঘটনাচক্রে, বুধবারই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার অনুগামীদের বাংলাদেশে ফেরানোর দাবিতে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় একদল জনতা। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন একই সঙ্গে হবে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটও। নির্বাচন ঘোষণার পরেই বাংলাদেশে বিভিন্ন নেতার মুখে ভারতবিরোধী বক্তৃতাও শোনা যায়।