কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলা সদরে ঘোরাউত্রা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপি'র দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার ১২ই আগস্ট সকাল থেকেই দেশীয় অস্ত্র,রামদা,বাশেঁর লাঠি নিয়ে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হামলা,ভাংচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৪জন আহত হয়েছে। পাঁচজনকে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে এবং দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।বাকি আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষস্থল থেকে আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে নিকলী থানা পুলিশের একটি টিম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীদের পুলিশের গাড়ীতে বেপরোয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুলিশ পিছু হটে।এর মধ্যে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নিকলী নতুন বাজার প্রধান সড়ক ও এলাকা। কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় থানা পুলিশের পুরো টিম ওসি কাজী আরিফের নেতৃত্বে ঘটনাস্থালে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মুহুর্তেই দোকানপাট যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রায় ৫ঘন্টা পর যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট খুলতে দেখা গেছে। তবে বিকেল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় উভয় পক্ষের কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি।
সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিরা হলেন,দরগাহাটি এলাকার শামসুদ্দিনের পুত্র আজারুল ইসলাম সোহেল( ৪৪),দরগা হাটি এলাকার তামেলের পুত্র এমদাদুল (২১),নাগারছি হাটি এলাকার আ: ছোবহানের পুত্র
গিয়াসউদ্দিন (৮২), নগর গ্রামের নয়নের পুত্র মোঃ রমজান (১৮), নাগারছিহাটি এলাকার রায়হানের পুত্র কামরুল ইসলাম (৩৮), নাগারছিহাটি এলাকার গিয়াস উদ্দিনের পুত্র সাদ্দাম হোসেন (৩০),নাগারছি হাটি এলাকার মৃত আঃ ছোবহানের পুত্র আল ইসলাম (৭০), পিতা মৃত আঃ ছোবান সাং নাগারছি হাটি
রাকিম (৩৫),সোহাগ(৩০), কাজল মিয়ার পুত্র মোঃরিয়ান (১৮),চুন্তিহাটি এলাকার শুক্কুরের পুত্র ইসলাম উদ্দিন (কডু) (২৮) চুন্তীহাটি দরগা হাটি এলাকার কফিন উদ্দিনের পুত্র মোঃ খেলন (২৭) ফিরোজ আলী (২৫)লতিফের পুত্র ফুরকান(৪০)।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে নিকলীতে অবৈধ বালু উত্তোলন কে কেন্দ্র করে নিকলী সদর ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন, ও নিকলী উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আজাহারুল ইসলাম সোহেলের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। উল্লেখ্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ছাদলের সাথে গতকাল ১১ আগস্ট রাত আটটার দিকে মহরকোনা এলাকায় বালু ফেলা কে কেন্দ্র করে এই দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এবং সোহেল বালু ফেলতে নিষেধ করে। এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার রক্তখয়ি সংঘর্ষের সূত্রপাত।
থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়,সকাল ১১টার দিকে পূর্ব গ্রামের দরগাহাটি ও নগর নাগারছিহাটি এলাকার শত শত লোকজন দেশীয় অস্ত্র রামদা,ভল্লম,লাঠিসোটা নিয়ে নতুন বাজার মোড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ লিপ্ত হয়।এতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপ দোকানের সাটার, বাড়িঘর ভাংচুর করে।এতে উভয় পক্ষের ১৪জন গুরুতর আহত হয়।
দরগাটির যুবদল নেতা আজহারুল ইসলাম সোহেল বলেন,গতকাল রাতে ঘোনাউত্রা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের সময় উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে ১লাখ টাকা জরিমানা করে। এতে প্রতিপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে সাথে থাকায় আমাকে টার্গেট করে সকালে একা পেয়ে ২০/৩০জনের একটি গ্রুপ প্রতিরোধ করে অতর্কিত হামলা চালায়।এতে সংবাদ পেয়ে আমার এলাকার লোকজন আমাকে উদ্ধার করতে আসলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
অপরপক্ষের বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিনের ছেলে সাদেকুল ইসলাম ছাদু বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন নিয়ে আমাদের সাথে কারো বিরোধ নেই,সকালে আমি করমপুর যাচ্ছি।এমতাবস্থায় সোহেলের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন এসে আমার বাড়ীঘর ভাংচুর করে আমাদের লোকজনের উপর হামলা করে।আমাদের অনেকজন আহত হয়েছে।পূর্ব শত্রুর জের ধরে এ ঘটনা ঘটায়।আমরা সুস্থ বিচার চাই। বালু উত্তোলন নিয়ে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.সোহাগ মিয়া বলেন,হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আহত ৭জন এসেছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের পর ২জনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
নিকলী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)কাজী আরিফ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,বালু উত্তোলনের বিরোধ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১২জন আহত হয়। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।তবে এখনো পর্যন্ত উভয় পক্ষের কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি।অভিযোগ ফেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।