আবদুল হাই ইদ্রিছী, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার): “চাপাতার ভর্তা ও আটার রুটি খেয়ে চা শ্রমিকের দিন চলে” এই কথাটি যেন মৌলভীবাজারের চা বাগান এলাকার শ্রমজীবী মানুষের জীবনের নির্মম বাস্তবতা। এখনো অগণিত চা শ্রমিক প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করেও মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে।
গত ২৭ জুলাই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পদ্মছড়া চা বাগানে গিয়ে দুপুর ২টায় দেখা যায়, নারী শ্রমিকরা সারি বেধে বসে চা পাতা ওজন করে গাড়িতে তোলার জন্য অপেক্ষা করছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৪টা পর্যন্ত তারা চা পাতা তোলার কাজে ব্যস্ত ছিল।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই সকালবেলা অল্প খাবার খেয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন। কেউ কেউ সাথে নিয়ে যান চালভাজা, পান্তা ভাত, রুটি বা মুড়ি, সাথে থাকে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, রসুন ও লবণ। এসব উপকরণ দিয়ে তাঁরা তৈরি করেন বিশেষ এক ধরনের চা পাতার ভর্তা, স্থানীয়ভাবে যাকে বলা হয় “পাতিচখা”। এটিই তাদের মধ্যাহ্নভোজের মূল ভরসা।
চা শ্রমিকরা জানান, প্রতি সপ্তাহে সোমবার থেকে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। এর বাইরে সংসারের কাজ সামলাতেও হিমশিম খেতে হয় নারীদের।
চা বাগানের জীবন যেমন কঠিন, তেমনি তাদের আয়ও খুব সীমিত। মৌলভীবাজারে রয়েছে ৯২টি চা বাগান, এর মধ্যে মাধবপুর ও পদ্মছড়া বাগানের চিত্রও ভিন্ন নয়। নারী শ্রমিকরা জানান, মজুরি বাড়লেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘প্রশাসন থেকে চা শ্রমিকদের সবসময় সহযোগিতা করা হয়। অসুস্থতা বা অন্যান্য সমস্যায় পড়লে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই। তবে তাদের জীবনমান আরও উন্নত করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন।’
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে চা শ্রমিকদের জন্য কিছু প্রকল্প থাকলেও সেগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন ও নিরাপত্তার মতো মৌলিক অধিকার এখনো অনেকাংশে অধরাই রয়ে গেছে এই পরিশ্রমী জনগোষ্ঠীর জন্য।