উপকুলীয় জনপদ খুলনা জেলার কয়রা উপজেলায় সাদা সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়িতে হঠাৎ মড়ক দেখা দিয়েছে। এতে করে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এলাকার শত শত মৎস্য চাষি। মওসুমের শুরুতেই কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই ব্যাপকহারে চিংড়ি মারা যেতে শুরু করেছে। ফলে উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নের চিংড়ি ঘের এখন ফাঁকা হতে বসেছে। যে কারণে চিংড়ি চাষিদের কপালে চরম দুশ্চিন্তার ভাঁজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের অধিকাংশ ঘেরে এ মড়কের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। মাছ মরে পচে যাওয়ায় পানি হয়ে উঠেছে দুর্গন্ধযুক্ত ও বিষাক্ত। এই পরিস্থিতিতে চাষিরা যেমন প্রতিকার করতে পারছেন না, তেমনি কোনো ওষুধে কাজ না হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা। অনেক কিছু করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন বাগদা চাষিরা।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬নং কয়রা গ্রামের মৎস্য চাষি আব্দুস সামাদ ঢালী জানান, তার ঘেরে কেজিতে ৬০টি সাইজ বাগদা হয়ে উঠে। এর মধ্যেই হঠাৎ করে মাছ মরা শুরু হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে মাছ ধরে নেওয়ার আগেই তা সবশেষ। সে এ বছর লোন নিয়ে চাষ শুরু করে। মাছ মারা যাওয়ায় এখন তার মাথায় হাত উঠে গেছে। বর্তমানে দুশ্চিতায় ভুগছেন। একই গ্রামের শ্যামল কয়াল বলেন, প্রতি গোনে গোনে পোনা ছেড়েছি। দুই কোটার মাছ মারা গেছে। নিচে পচে গেছে সব। এখন কী করবো বুঝতে পারছি না।
পাথরখালী গ্রামের আলাউদ্দীন জানান, তার ১৪ বিঘা জমিতে মৎস্য ঘের রয়েছে। ঐ ঘেরে তিনি প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার পোনা ছাড়েন। প্রচন্ড তাপদাহে তার ঘেরের অধিকাংশই বাগদা চিংড়ি মারা গেছে। পাশের ঘেরের একই অবস্থা। কেউ কেউ ঘের শুকিয়ে আবার নতুন করে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু লোন, খাবার, পোনার টাকা সবই তো চলে গেছে। এ তো ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। প্রতিটি ইউনিয়নের মৎস্য ঘেরের অবস্থা একই রকম।
কয়রা উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার সরকার বলেন, চাষিদের কাছ থেকে মড়কের খবর পেয়েছি। তাদের অনেকেই লোকাল মার্কেট থেকে পোনা কিনে ঘেরে ছেড়েছে। অন্যদিকে ঘেরে যে পরিমাণ পানি রাখা দরকার তার চেয়ে অনেক পানি কম রাখায় গরমে মাছ মরছে। মাছ মারার খবরে তারা সম্প্রতি পানি পরিবর্তন করছেন। একজন ভাইরাস আক্রান্ত ঘেরের পানি খালে ছেড়ে দিলে তা অন্য ঘেরে ঢুকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
অধিকাংশ চাষি পানি শোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। যার কারনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় চাষিদের ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করতে পারতো। একবার ভাইরাস ঢুকলে তার বিরুদ্ধে কোনো এন্টিবায়োটিক কার্যকর হয় না। কারণ এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়। তিনি আরও বলেন, চাষিরা ঘেরের পানি ও মাটি নিয়ে এলে আমরা তা পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে প্রস্তুত আছি। তিনি নিজেও বিভিন্ন মৎস্য ঘের পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য চাষিদের পরামর্শ প্রদান করবেন।