জাবি সংবাদদাতা : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় জুলাই হত্যার বিচার ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের আকুতি জানান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

গতকাল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও অ্যাক্টিং ভিসি অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এসময় তারা জুলাই শহীদদের হত্যার বিচার ও আহতদের পুনর্বাসনের দাবি জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় এবং শহীদদের স্মরণে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরবর্তীতে শহীদদের স্বীকৃতি স্বরূপ সংবর্ধনা, সনদপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। শহীদ পরিবারের সদস্যরা আবেগঘন বক্তব্যে প্রশাসনের কাছে বিচারের দাবি জানান।

শহীদ আলিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবির বলেন, “আমরা আমাদের সন্তানদের হারিয়েছি, তার এক বছর হতে চলল, কিন্তু হত্যাকারীদের বিচার এখনো হয়নি। আপনারা শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এই চেয়ারে বসেছেন। ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করুন।”

শহীদ শ্রাবণ গাজীর পিতা মো. মান্নান গাজী বলেন, “আমাদের সন্তানরা তো আর ফিরে আসবে না, কিন্তু হাসপাতালে যারা আহত আছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন।”

শহীদ নাফিসা হোসেনের মামা মো. হজরত আলী অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, “নাফিসার মতো অনেকেই প্রাণ দিয়েছে। শহীদ পরিবারের পুনর্গঠন ও তাদের নামে হল, সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণের দাবি জানাই।”

জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাফরুহি সাত্তার বলেন, “৫ আগস্ট গণভবন অভিমুখে পদযাত্রার সময় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেও হামলা ঠেকানো যায়নি। এক কাঠমিস্ত্রি আমাকে বলেছিলেন, ‘এই ছোট বাচ্চাদের যারা গুলি করে মেরেছে, তাদের বিচার হতেই হবে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, “জুলাই আন্দোলনের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাসব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসেবে আজকের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। শহীদ পরিবারগুলোর দাবি আমি সিন্ডিকেট সভায় তুলব। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পড়াশোনার সুযোগ, পাশাপাশি কর্মসংস্থানের বিষয়েও প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে।”

এর আগে সকাল ১০টায় শহীদ মিনার থেকে ‘অদম্য-২৪’ স্মৃতিস্তম্ভ পর্যন্ত শিক্ষকরা মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণ ও ধারণ করতে মাসব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করছে।