ভূরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটারদের মাঝে ততই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। ভোটারদের মাঝে চলছে নানা ধরনের সমীকরণ। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ ধরেই ইতোমধ্যে নির্বাচন করতে রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন।

তিন দিক থেকে ভারত বেষ্টিত কুড়িগ্রামের ১ আসনটি ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলার ২৫ টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং ১টি পুলিশ স্টেশন নিয়ে গঠিত।

নির্বাচন কমিশনের ২০২৩ সালের তথ্যানুযায়ী এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ২৯ হাজার ১শত ৬৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৩ হাজার ২ শত ৬৭, নারী ভোটার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮ শত ৯৭ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ৩ জন।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশ এখন পুরোপুরি নির্বাচনী ট্রেনে। আসন্ন নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-১ আসনে দেশের সবচাইতে বড় দল বিএনপির একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত চুড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি দলটি। অপর দিকে দীর্ঘদিন আগে জামায়াত তাদের একক প্রার্থী ঘোষণা করায় পুরো নির্বাচনী এলাকায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থী।

সংসদীয় আসন ২৫ কুড়িগ্রাম-১ আসনে সাবেক এমপি, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা, ড্যাব নেতা ও জেলা বিএনপির সদস্য ডা. ইউনুছ আলী, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ড্যাব নেতা ডা. মাহফুজার রহমান মারুফ, বিএনপির নাগেশ্বরী উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম রসুল রাজা মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাবেক ছাত্র নেতা ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় ইউনিট সদস্য সহকারি অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলামকে তাদের একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী হারিসুল বারী রনি এবং জাকের পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে আব্দুল হাই মাস্টার রয়েছেন। এছাড়া গণঅধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লার নামও শোনা যাচ্ছে।

জানাগেছে, বেশ কিছুদিন থেকে বিএনপির কুড়িগ্রাম জেলা আহ্বায়ক কমিটির সাথে সাইফুর রহমান রানার বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ চলে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এ বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। শুধু তাই নয়, দুপক্ষই বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি পৃথক পৃথকভাবে পালন করার ঘটনাও ঘটেছে। এর ফলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যখন নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ চালাচ্ছে, তখন বিএনপি নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত রয়েছে।

এদিকে দীর্ঘদিন আগে থেকেই জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা করায় তিনি গোটা নির্বচনী এলাকায় একদফা গণসংযোগ শেষ করেছেন। বিভিন্ন মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি ওয়ার্ড পর্যন্ত তারা বিরামহীন ভাবে পথসভা, জনসভা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জনসংযোগের ক্ষেত্রে সব দলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর এই প্রার্থী।

এ আসনটি মূলত জাতীয় পার্টির ঘাটি হিসাবে পরিচিত। ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা প্রার্থী একেএম মোস্তাফিজুর রহমান জয়লাভ করেছিলেন। জাতীয় পার্টি নির্বাচনের সুযোগ পেলে এ আসনে তিনি জাতীয় পার্টির একক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন। রাজনৈতিক পরিবেশ অনুকুল না হওয়ায় এখন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মরীরা নিশ্চুপ রয়েছেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী হারিসুল বারী রনি বিভিন্ন দলীয় প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকলেও মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগে তেমন সক্রিয় নন।

জাকের পার্টির প্রার্থী আব্দুল হাই মাষ্টার স্থানীয়ভাবে পরিচিতি এবং তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোটার রয়েছে। এই দলের প্রার্থী আব্দুল হাই মাষ্টার বাই সাইকেল যোগে নিজেই নিজের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গণ অধিকার পরিষদের তেমন কোন প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়নি। এনসিপি উপজেলা কমিটি গঠন করলেও এখনো এ আসনে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম-১ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও ভোটারের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনের ভোটারদের মধ্যেও চলছে ব্যাপক নির্বাচনী আলোচনা ও ভোটের হিসাব নিকাশ। এই এলাকার ভোটার ও নির্বাচন বিশ্লেষকদের ধারনা জামায়াত ও ইসলামী দলগুলোর মধ্যে জোট হলে এবং তাদের একক প্রার্থী দিলে বিএনপি বেকায়দায় পড়তে পারে। কারন এই আসনে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টি ভোট করতে পারলে পাল্টে যেতে পারে ভোটের হিসাব নিকাশ। তখন আসনটিতে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভোটারদের প্রত্যাশা, দলীয় প্রতীক কিংবা নেতা নয়। প্রয়োজন বাস্তব উন্নয়ন, সমস্যা সমাধানের দিকনির্দেশনা। এমন একজন জনপ্রতিনিধি তারা চান, যিনি দুর্যোগে-দুর্দিনে জনগণের পাশে থাকবেন।