বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেছেন, মেহনতি শ্রমিকের হাতেই গড়ে ওঠে দেশের প্রকৃত কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ। সেই শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ আজ শোষণ বঞ্চনা, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার। ফলে শ্রমিকদের মানবিক অধিকার রক্ষা এবং শ্রমিকবান্ধব নতুন ধারা সৃষ্টি করতে আমাদের ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, অসহায় দরিদ্র শ্রমিকদের সহায়তায় সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা দরকার । সমাজের প্রতি বিত্তবানদের দায়ের বদ্ধতা রয়েছে। তিনি আরো বলেন সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অসহায় বেকার ও হতদরিদ্র শ্রমিকদের মাঝে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি পবিত্র কুরআনের সূরা ক্বাসাসে মহান আল্লাহ পাক শ্রমজীবী মানুষের যে অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন তা তুলে ধরে ইসলামী শ্রমনীতি সমাজে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকলকে শরীক হওয়ার উদাত্ত আহবান জানান। খুলনা মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে মহান মে দিবস ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে খালিশপুর বিআইডিসি সড়কের নিজস্ব কার্যালয়ে সুবিধা বঞ্চিত দর্জি শ্রমিকদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ডা. সাইদুজ্জামানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি প্রখ্যাত শ্রমিক নেত্ ামাস্টার শফিকুল আলম, মহানগরী সহ-সভাপতি এস এম মাহফুজুর রহমান, কাজী মাহফুজুর রহমান, শ্রমিক নেতা জাহিদুল ইসলাম, আল হাফিজ সোহাগ, বুলবুল কবির, বদরুর রশিদ মিন্টু, আনিসুর রহমান, মোখলেসুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, মালেক মুন্সী, কামরুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান জুনায়েদ, মুহিব্বুর রসুল, ইমদাদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ শ্রমিকদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন।

মাস্টার শাফিকুল আলম বলেন, শ্রমিকরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত শ্রম বিনিয়োগ করলেও তারা বরাবরই নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। শ্রমিকরা বিভিন্ন সেক্টরে প্রতিদিন ৮ ঘন্টারও বেশী সময় শ্রম দিলেও তাদেরকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। তাদের জন্য এখন ন্যুনতম মজুরির দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। শ্রমিকদের শ্রমেরই উপর ভিত্তি করে একশ্রেণির মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়লেও ভাগ্যাহত শ্রমিকরা উপেক্ষিতই থাকছেন। কল-কারখানা ও উৎপাদন সেক্টরগুলোতে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব এখন বেশ ভয়াবহ। মাঝে মাঝেই শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে ন্যায্য অধিকারের দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত তাদের ন্যায্য অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়নি। তাই ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে মালিক-শ্রমিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব নিরসনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে আজিজুল ইসলাম ফারাজী বলেন, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও আদর্শ হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মানবিক আদর্শকে অনুস্মরণ ও অনুকরন করে আমাদের সকল প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। ন্যায় ইনসাফ ভিত্তিক ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ছাড়া শ্রমজীবি মানুষ তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেনা। পরকালীন জবাবদিহিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের কারণেই শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সদাসর্বদা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ বাংলার মানুষকে উপহার দেওয়া সম্ভব এক্ষেত্রে শ্রমিকদেরকে দেশ গড়ার কারিগর ও অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে।