দৃষ্টি যতদূর যায় সবুজ আর সবুজ। প্রতিটি মাছের ঘেরের ভেড়িতে কোনো না কোনো ফল ও সবজির চাষ করা হচ্ছে। এ দৃশ্য খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের আনন্দনগর বিলের। শুধু আনন্দনগর বিল নয়, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রতিটি বিলের মাছের ঘেরের ভেড়িতে এভাবেই ফল ও শাকসবজির চাষ করে বাড়তি আয় করছেন কৃষকরা। গত কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের ঘেরের বেড়িতে ব্যতিক্রম ফল হিসেবে অফসিজিনের তরমুজের চাষ করা হলেও এ বছর অনেকেই তরমুজের পাশাপাশি সৌদি আরবের রকমিলন বা সামমাম চাষ করেছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন এ সব কৃষকরা। আনন্দনগর গ্রামের চাষি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ৫ বিঘার মাছের ঘেরের ভেড়ীতে প্রথমবারের মত সৌদি আরবের সুস্বাদু ফল সামমাম ও অফসিজনের তরমুজ চাষ করেছেন। যদিও তরমুজ ফলন এখন শেষ পর্যায়। তিনি বলেন, প্রতিবছর ঘেরের ভেড়িতে অফসিজনের তরমুজসহ অন্যান্য সবজি চাষ করলেও এবার শখের বসে প্রথম সৌদি আরবের সামমাম চাষ করি। কোন প্রকার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই এই সামমাম চাষে এতটা সফলতা পাবো চিন্তা করিনি। তিনি বলেন, চাষাবাদে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এই পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ টাকার ফসল বিক্রি করেছি। এখনো যা আছো তা আরো ৫০/৬০ হাজার টাকা বিক্রি হবে।

একই গ্রামের তোফেজ্জেল হোসেন বলেন, আনন্দনগর বিলে ৬ বিঘা জমিতে বাঙ্গী, কুমড়া, শসা, গ্রীষ্মকালীন টমোটো ও অফসিজনের তরমুজের চাষ করেছি। চাষাবাদে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে শুধু শসা বিক্রি হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকার। অন্যান্য ফসল লাখ টাকায় বিক্রি হবে। তিনি বলেন, আমাদের এই বিলের কোথাও ফাঁকা নেই। প্রতিটি ঘেরের বেড়িতে বলতে গেলে ১২ মাস বিভিন্ন ফল ও সবজি চাষ হয়ে থাকে। এতে মৎস্য চাষিরা বাড়তি আয় করছে। আমাদের এই চাষাবাদে যেকোন সমস্যা হলে কৃষি অফিস পরামর্শ দিয়ে থাকে। বাড়তি লাভের কারণে দিন দিন ঘেরের বেড়িতে চাষাবাদ বাড়ছে।

রূƒপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তরুণ কুমার বালা বলেন, চলতি মওসুমে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মাছের ঘেরের পাড়ের ৪০৫ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে ফল ও শাক সবজি চাষে সবুজ বিপ্লব ঘটেছে। একজন চাষী যখন চাষাবাদে সফলতা অর্জন করেন তখন আমাদেরও ভালো লাগে। এ উপজেলার কোন চাষীকে কৃষি বিষয়ক পরমর্শ নেওয়ার জন্য কৃষি অফিসে আসতে হয়না। অফিসে ফোন করলে তার জমিতে সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। তাদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য ২৪ ঘন্টা আমার মোবাইল খোলা থাকে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে যখন যে প্রণোদনা বা সার-বীজ আসে তা আমার প্রকৃত চাষির হাতে তুলে দিচ্ছি। এতে চাষীরা খুব খুশি।