শহীদুল ইসলাম, সাতকানিয়া থেকে : লেখাপড়া করার জন্য গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় গেলেও কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন অংশ নিয়ে গুরুতর আহত হয়ে নিজের জীবনটিই বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে তার। যেকোনো সময় নিভেও যেতে পারে তার জীবন প্রদীপ। ৫ আগস্ট ঢাকায় পুলিশের গুলীতে আহত হয়ে দীর্ঘ সাত মাস ধরেই ঢাকায় হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের মনোহর চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ নুরুচ্ছফার ছেলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা হাবিব উল্লাহ হামিম (২১)। তার শরীরে একাধিকবার অস্ত্রপচার করা হলেও এখনো পর্যন্ত আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে হামিম ঢাকার সি এম এইচ( ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের ১ নং ওয়ার্ডের ১০ নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হামিম মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকার ফাজিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর পূর্ব (চকবাজার শাখার বায়তুলমাল সম্পাদক ও ৩১ ওয়ার্ড সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। জানা যায়, কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে প্রতিদিনই আন্দোলন অংশ নিতেন হামিম। সর্বশেষ ৫ আগস্ট দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখারপুল এলাকায় আন্দোলন চলকালে পুলিশের গুলীতে গুরুতর আহত হয়। এরপর সাধারণ ছাত্র ও শিবির কর্মীরা হামিমকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে দেয়। সেখানে যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে কাকরাইলস্থ আরোরা স্পেশালিস্ট হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখান থেকে নেয়া হয় সিএমএইচএ। হাসপাতালে নেওয়ার দীর্ঘ সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো হাসপাতাল ছাড়তে পারেনি হামিম। একাধিক বার অস্ত্রপচার করা হলেও আরো একাধিকবার অস্ত্রপচার করতে হবে তার। হামিমের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শরীরের একাধিক স্থানে গুলী লাগে হামিমের। এরমধ্যে একটি বুলেট পাঁজরের দিক দিয়ে ঢুকে পায়ুপথ ছিঁড়ে যায়। ফেটে যায় মূত্রথলি। কোমরের সাথে পায়ের জয়েন্ট এর হাড্ডি ভেঙে যায়, ছিঁড়ে যায় ডান পায়ের লিগামেন্ট। যার ফলে হাঁটার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে বারবার। তার শরীরে এখনো একটি বুলেট থেকে যায়। তার শরীরে ইতোমধ্যে চারবার অস্ত্রপচার করা হয়েছিল। আরো দুইবার অস্ত্রপচার করতে হতে পারে বলে অভিমত চিকিৎসকদের। সূত্র জানায়, কোটা বৈষম্যবিরোধীরা আন্দোলনের অংশ নেয়া শিক্ষার্থী ৪ আগষ্ট মার্চ ফর ঢাকা কর্মসূচী ঘোষণা করলে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে ঢাকার গণভবনের দিকে এগুতে থাকে। এর মধ্যে পুলিশের ব্যাপক বাধার মুখে পড়ে চানখারপুল এলাকায়। সেখানে পুলিশ নির্বিচারে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলী ছুড়ে। পুলিশের গুলীতে বেশ কয়েকজন ছাত্র-জনতা নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক। এর মধ্যে লোহাগাড়ার ইসমামও নিহত হয়েছিল। হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন হামীমের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। হামিম বলেন, দেশকে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট মুক্ত করার জন্য ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৪ এর জুলাই আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে অংশগ্রহণ করি। আলহামদুলিল্লাহ, প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ ফ্যাসিস্ট মুক্ত হয়েছে। আমার জীবন প্রদীপ নিভে গেলেও দেশকে হায়েনা মুক্ত করতে পারায় আমার আর কোন আক্ষেপ রইলো না। আমার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারো দেশের কাজে মনোনিবেশ করতে পারি।