দুদুকের দায়ের করা মামলায় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার সাবেক এমপি এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডলকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তার জামিন আবেদন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক ফজলে খোদা মোহাম্মদ নাজির এ আদেশ প্রদান করেন। নুর মোহাম্মদ মন্ডল পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং ঐ আসনের সাবেক এম পি এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। নুর মোহাম্মদ মন্ডল তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের সাথে জড়িয়ে দুইবার এমপি এবং তিন বার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার এসব কৃতিত্ব অর্জন করেন। সেই সাথে অঢেল সম্পদেরও অধিকারী হন।

মিষ্ট ভাষি জনবান্ধব এই নেতা সুবিধামত সময়ে বার বার দল বদল করায় এলাকার মানুষ রসিকতা করে তাকে ডিগবাজি নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক ২০২০ সালে সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নুর মোহাম্মদ মন্ডলের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন। এর আগে চলতি বছরের ৯ই মার্চ দুদক অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় নুর মোহাম্মদ মন্ডলের ৮টি ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ, তাঁর মালিকানাধীন বিনোদন কেন্দ্র পীরগঞ্জের “আনন্দ নগর” সহ ৩ হাজার ১৩০ দশমিক ৭৩ একর জমি এবং আনুমানিত ৯ কোটি টাকা মুল্যের স্থাবর অস্থাবর সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দেন আদালত।

দুদকের পক্ষ্যে রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ পরিচালক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা রুবেল হোসেন এই মামলা দায়ের ও সম্পদ জব্দের আবেদন করেন। দুদকের আইনজীবি একেএম হারুন উর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

উল্লেখ্য, নুর মোহাম্মদ মন্ডল ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে পীরগঞ্জ আসন থেকে জাতীয় পাটির মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ভাসুর আব্দুল ওয়াহেদ কানু মিঞাকে পরাজিত করে প্রখম এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালে একই আসন থেকে জাতীয় পাটির মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে দ্বিতীয় বার এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি জাপা ছেড়ে একই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিন করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে তিনি শেখ হাসিনার ভাসুর পুত্র একেএম ছায়াদাত হোসেন বকুলকে পরাজিত করে পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতিক নিয়ে দ্বিতীয়বার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে নুর মোহাম্মদ মন্ডল তৃতীয়বারের মত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০২৫ সালের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে নুর মোহাম্মদ মন্ডল আত্মগোপন করেন। এ সময় বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অর্থ সহায়তার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়।