গ্রাম-গঞ্জ-শহর
কাপ্তাইয়ে খালখনন-স্লুইস গেট নির্মাণে অনিয়ম- দুর্নীতি
কাপ্তাই উপজেলাধীন রেশম বাগান ও কয়লার ডিপু নামক এলাকায়, পতিত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের নামে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অর্থায়নে প্রায় ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও ওই প্রকল্পের কাজ ২০২৫-এ এসেও শেষ করেনি প্রভাবশালী ঠিকাদার পক্ষ।

মাহফুজ আলম, কাপ্তাই সংবাদদাতা: রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের খাল খনন, ব্লক নির্মাণ স্থাপন ও সুইজগেট নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কাপ্তাই উপজেলাধীন রেশম বাগান ও কয়লার ডিপু নামক এলাকায়, পতিত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের নামে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অর্থায়নে প্রায় ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও ওই প্রকল্পের কাজ ২০২৫-এ এসেও শেষ করেনি প্রভাবশালী ঠিকাদার পক্ষ। তবে এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিডি বিভাগের কোন মাথা ব্যাথা নেই বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কাপ্তাই উপজেলাধীন চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের রেশম বাগান তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ায় (১৯ ফেব্রুয়ারি) ২০২২ এ ভিত্তি বস্তুর স্থাপনের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করা হয়, টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প।
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অর্থায়নে এলাকার উন্নয়ন ও স্থানীয় কয়েক হাজার মানুষ কৃষিকাজ ও উদ্যোক্তারা উপকৃত হওয়ার লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন বলে জানিয়েছেন এলজিইডি বিভাগের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানকালে আরো জানা গেছে ,টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের এলজিইডি রাঙামাটি জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আহাম্মেদ শফি'র তত্ত্বাবধানে চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের রেশম বাগান তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া মুখ হতে রেশম বাগান ছড়ার মুখ পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার খাল খননের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি, মৎস্য চাষ উৎপাদন এবং সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে এলাকার প্রায় তিন থেকে চার হাজার জনগণের আত্ম-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। যা এযাবৎ এখনো কারো উপকারে আসেনি।
এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা প্রকৌশলী (অঃদাঃ) থাকা মনিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের আওতায় ২টি সুইস গেইট নির্মাণ কাজ কার্যাদেশের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউনুস ব্রাদার্সকে যথা সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এলজিইডি কর্তৃপক্ষ থেকে অদৃশ্য কারণে কোন নোটিশ করা হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
এছাড়াও তিন বছর পূর্বে ৩৪ লাক টাকা ব্যয়ে ২ কিলোমিটার খাল খননের কাজ দুই মাস মেয়াদের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও তা দৃশ্যমান হয়নি। এছাড়া প্রকল্পের অধীনে ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২টি সুইস গেইট নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার পক্ষ। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ২০২২ সালের মার্চ মাসে সুইস গেইট দুইটির নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার শর্ত থাকলেও ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসো শেষ হয়নি। অপরদিকে ছড়া খাল ও চাষাবাদের জমি ভাঙ্গন রোধে সি সি ব্লক নির্মাণ ও স্থাপন করনে অনিয়ম দুর্নীতির হয়েছে বলে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এসব বিষয়ে আত্মপক্ষের বক্তব্য নিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউনূস ব্রাদার্স বারবার মুঠোফোনে কালাপের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে রেশম বাগান তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ার অধিবাসী ষাটোর্ধ অঞ্জনা তনচংগ্যা ও কৃষক যতন তনচংগ্যা বলেন, প্রকল্প গুলো বাস্তবায়ন যদি হতো পানি সংরক্ষণের ফলে ছড়ার ২ পাশে শুষ্ক মৌসুমে কৃষকরা নানা রকম শাক-সবজি আবাদ করতে পারেনি। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবং খালের দুই পাশে সামাজিক বনায়ন ও মৎস্য চাষ করার কথা থাকলেও কিন্তু তার একটিরও সফল কাজের দৃশ্যমান্য হয়নি। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রেখে কৃষি চাষ, সামাজিক বনায়ন এবং মৎস্য চাষ করা থেকে প্রান্তিক কৃষকরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর দাবি অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত যারা তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। এই প্রকল্পের বিষয়ে এলজিইডি বিভাগের রাঙ্গামাটি নির্বাহী প্রকৌশলী আহাম্মেদ শফী জানান, প্রকল্পের কাজ ধীরগতি হয়েছে, এখনো সুইসগেট,ব্লক ও খাল খননের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি, এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আমরা বারবার তাগিদ দিলেও তারা কোন কিছু তোয়াক্কা করছে না।