পঞ্চগড় সংবাদদাতা : গত শনিবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পঞ্চগড় জেলা শাখারা উদ্যোগে পঞ্চগড় অডিটোরিয়ামে ওয়ার্ড ও ইউনিট সভাপতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পঞ্চগড়-১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আমীর মাৗঃ ইলবাল হোসাইনের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারী মাওলানা দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা আব্দুল হালিম।

প্রধান আতিথির ভাষণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর বলেন বলেন, আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন। রাসূল (সাঃ) তাঁর দেখানো পথেই মদীনার রাষ্ট্রে কুরআনের আইন বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন। এখন নবী (সাঃ) নাই। নবীর পরিবর্তে আল্লাহতাআলা আমাদেরকে খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলার আইনকে রাসূলের (সাঃ) দেখানো পদ্ধতিতে প্রতিনিধি হিসেবে সমাজে চালু করব এটা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রধান আতিথির ভাষণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর বলেন, সংস্কারের আগে কোন নির্বাচন হবে না। সরকারকে আমরা বলেছি, আপনারা সংস্কার করেন এরপর নির্বাচন দেন। আগে বিচার করেন এরপর সিদ্ধান্ত নেন কারা নির্বাচনের যোগ্য, আর কারা যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে । সেভাবে নির্বাচন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিস্টদের অত্যাচারে নির্য়াতিত হয়েছে। ওলামায়ে কেরামদেরকে শেকল বেঁধে হাতে হাতকড়া পরিয়ে এবং পায়ে বেড়ি দিয়ে জেলখানায় নিয়ে গেছে। রিমান্ডে নিয়ে অমানসিক-অমানবিক নির্য়াতন করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন সময় এতো আলেমকে এভাবে হাতে হাতকড়া- পায়ে বেড়ি দিয়ে জেল খানায় রাখা হয়নি। তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসকে ধ্বংস করেছে। কেয়ারটেকার সরকারকে নিষিদ্ধ করে সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম ছিলেন এই কেয়ারটেকার সরকারের রূপকার। খেলাধুলা হলে যে দলের রেফারি হবে সেই খেলা সুষ্ঠ হবে না। তাই দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন সুষ্ঠ হয় না। কেয়ারটেকার সরকারকে দিয়েই নির্বাচন দেয়া দরকার। সবাই মেনে নিল, এমনকি এই ফ্যাসিস্টরাও তখন মেনে নিয়েছিল। মেনে নেওয়ার পর তারা দেখল যে গণতন্ত্রের মাধ্যমে যদি তাদেরকে চলে যেতে হয়। তাই এটা বাদ দিতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের

ইতিহাসকে ধ্বংস করেছে কেয়ারটেকার সরকার নিষিদ্ধ করে। সংবিধান থেকে কেয়ারটেকার সরকার বিদায় করে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনকে হত্যা করেছে। একটা কথা আছে যে, ছাদের উপরে উঠতে আপনার সিঁড়ি লাগে তাই না? তারা সিঁড়ি দিয়ে উঠলো বটে সেই ছাদে। কিন্তু অন্য আর কাউকে ছাদে উঠতে দেওয়া হবে না। তারা সিঁড়িটা ভেঙ্গে ফেললো। যাতে নামতে না হয়। এখন বলেন চিরদিন কি ক্ষমতায় থাকা যাবে। বরং নামতে হবে সিঁড়ি ভেঙ্গে দিলেও। নামবে কি ভাবে? লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। গণতন্ত্রকে হত্যা করার পর ক্ষমতা থেকে নামতে চাইলেও বাংলাদেশের নির্যাতিত নিপীড়িত জনগণের ভয়ে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

বিশেষ আতিথির ভাষণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতা দখল করা এটা ইসলামী আন্দোলনের মৌলিক কাজ নয় তবে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা জন্য মানুষের সমর্থন ও রায় নিয়ে নেতৃত্ব পরিবর্তন করার কথা ইসলাম বলেছে। এ জন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের জন্য দু’ধরনের কাজ এসে গেছে। একটা হচ্ছে আমাদের সাংগঠনিক কাজ আরকেটা হচ্ছে নেতৃত্বের পরিবর্তন। বাংলাদেশের মানুষ চায় সৎ নেতৃত্ব, দুর্নীতিমুক্ত নেতা। যে নেতা মানুষের সেবা করবে। জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে সেই ধরণের সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার একটি দল, একটি সংগঠন। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্য, কুরআনের বিধান বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এক দল নেতা ও কর্মী তৈরি করছে জামায়াতে ইসলামী।

বিশেষ অতিথি আরো বলেন, জামায়াত কোন ভূঁইফোর দল নয়। জামায়াত নিয়মতান্ত্রিকভাবে নেতৃত্বের পরিবর্তন করতে চায়। আমাদের এই আদর্শিক পরিবর্তন যারা পছন্দ করে না তারা একেক সময়ে আমাদেরকে একক তকমা দিবে। কোন সময় বলবে স্বাধীনতা বিরোধী। কোন সময় বলবে জঙ্গী আর তাদের সাথে থাকলে সঙ্গী। তিনি প্রশ্ন করেন, যখন তারা আমাদের নেতাদের মন্ত্রী বানিয়েছিল তখন কি স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম না আমরা? এ জন্য এগুলোকে আমাদের বরণ করে নিয়েই কাজ করতে হবে। কারণ আপনি একটি মহাসত্যকে ধারণ করেছেন। আপনি যে আদর্শকে ধারণ করেছেন তা এটম বোমা-পারমাণবিক বোমা দিয়ে মোকাবেলা করা যায় না। আপনার ঈমানকে পারমাণবিক বোমা দ্বারাও ভোতা বানানো যায় না।

সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা আমীর সফিউল আলম, দেবীগঞ্জ উপজেলা আমীর মাওলানা আব্দুল বাসিত, বোদা উপজেলা আমীর মাওলানা জাহিদুল ইসলাম, আটোয়ারি উপজেলা আমীর মাওলানা ইউনুস আলী, পঞ্চগড় শহর আমীর মাওলানা জয়নাল আবেদীন, জেলা কর্মী পরিষদ সদস্য শহীদ আল ইসলাম, পঞ্চগড় জেলা সহকারি সেক্রেটারী আশরাফুল আলম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পঞ্চগড় জেলা সভাপতি আবুল বাশার বসনিয়া, সফিউল্লাহ সুফি, ছাত্র শিবিরের জেলা সভাপতি জুলফিকার রহমান প্রমুখ।

সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পঞ্চগড় জেলা শাখার সহস্রাধিক ওয়ার্ড ও ইউনিট সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিকেল সাড়ে চারটায় সম্মেলন শুরু হয়ে রাত সাড়ে আটটা পর্য়ন্ত কুরআন ও হাদীসের আলোকে ইসলামী আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করেন সংগঠনটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা।