ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারের উদ্দেশে ত্রাণ, জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী ও মানবিক সহায়তা নিয়ে আরও ১২০ মেট্রিক টন ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল মঙ্গলবার নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করেছে। সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান। ১২০ মেট্রিক টন ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে আছে, ৭৭ মেট্রিক টন শুকনো খাবার, নয় টনের বেশি তাবু ও পোশাক, ২৯ টন বিশুদ্ধ পানি, চার টন হাইজিন কিট এবং এক টন ওষুধসহ জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী। নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আরিফের নেতৃত্বে জাহাজটি আগামী শুক্রবার মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বন্দরে পৌঁছাবে। সেখানে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দলের কাছে ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করে জাহাজটি দেশে ফিরবে।

আইএসপিআর সূত্রে জানা গেছে, ইয়াঙ্গুন বন্দরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করা হবে। অন্তর্র্ব্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা ও সার্বিক তত্ত্বাধানে এ সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী, সেনা কল্যাণ সংস্থা এবং রেড ক্রিসেন্ট এ সহায়তার যোগান দিয়েছে। এই অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং তাদের দুর্ভোগ লাঘবে সহায়ক হবে।

ত্রাণ সহায়তা প্রেরণ কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, ‘এ ত্রাণ সহায়তা প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে বিদ্যমান পারস্পরিক সহযোগিতা, কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং সুপ্রতিবেশিসুলভ মনোভাব আরও জোরদার হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’

অন্যদিকে নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক গড়ে উঠলে রোহিঙ্গা ইস্যুসহ দ্বিপাক্ষিক নানা সমস্যা মোকাবেলা সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন।

২৮ মার্চ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে দুই ধাপে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর পরিবহন বিমানের মাধ্যমে ৩১ দশমিক ৫ টন ত্রাণসামগ্রী, উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তাকারী দল পাঠিয়েছে। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের দুর্যোগকালে বাংলাদেশের এই সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস আরও বাড়াবে এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ২০২৩ সালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কে বিমানযোগে ত্রাণ এবং উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তা দল পাঠিয়েছিল। ২০২৩ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’তে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের জনগণকে জাহাজযোগে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছিল। ভবিষ্যতেও যেকোনো জাতীয় ও বৈদেশিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের নীতিমালার আলোকে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী।