গত ২৭ অক্টোবর ‘খুলনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়’ প্রকল্পের সরকারি অনুমোদনপত্র জারি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে একনেকে অনুমোদনের ১৭ মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে আলো ফুটেছে। চলতি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৫০ একর জমি অধিগ্রহণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করতে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভূমি উন্নয়নের দরপত্র তৈরির জন্য গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জন্য প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে। সবমিলিয়ে জটিলতা কাটিয়ে নবযাত্রা শুরু হয়েছে খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের।

বিভাগীয় শহর খুলনায় একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার প্রধান এতে সম্মতি দেন। নাম দেওয়া হয় ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা’। এরপর সংসদে আইন পাশ, উপাচার্য নিয়োগ, স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য ১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। এর মধ্যেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে স্থবির হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। একপর্যায়ে খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা জানতে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নামের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ই অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। ওই সময় খুলনার বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক নেতাদের তৎপরতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পক্ষে মত দেয় স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। গত ১৩ এপ্রিল অধ্যাদেশ জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন ও নতুন নামকরণ হয় ‘খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (প্রথম নাম) আইন পাশ। ২০২৪ সালের ৯ মে একনেকে ১৮৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন। ২০২৫ সালের ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে ‘খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামকরণ। ২০২৫ সালের ২৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের সরকারিপত্র জারি।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানা গেছে, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আপাতত ৮টি অনুষদ থাকবে। এগুলো হচ্ছে মেডিসিন, সার্জারি, বেসিক সাইন্স ও প্যারাক্লিনিক্যাল সাইন্স, ডেন্টাল, নার্সিং, বায়োটেকনোলজি ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল টেকনোলজি ও প্রিভেনটিভ অ্যান্ড স্যোশাল মেডিসিন অনুষদ। সঙ্গে থাকবে বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল।

বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের সঙ্গে স্নাতকোত্তর এমডি, এমএস, এমফিল থাকবে। বর্তমানে সরকারি খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও মাগুরা মেডিকেল কলেজ, ৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং ৫টি নার্সিং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েছে। ২০২১ সালের ১ নভেম্বর থেকে নিরালা আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম আবু নাসের ফারুক বলেন, “শুরু থেকেই বটিয়াঘাটা উপজেলার ভেতরে লবণচর থানার পাশে ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য ৫০ একর জমি চূড়ান্ত করা হয়। সেখানেই স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হবে। এ জন্য ২০২৪ সালের ৯ মে একনেকে ১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পায়। গত ২৭ অক্টোবর জিও হয়েছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করেছি।’ মাস্টার প্লান অনুযায়ী প্রকল্পে ৫০ একর জমির মধ্যে সাড়ে ১৪ একর এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। প্রায় ৯ একর এলাকায় সড়ক, প্রায় ৪ দশমিক ৯১ একর জায়গায় ফুটপাথ, ১ দশমিক ৩৬ একর জলাশয় এবং ২০ একর এলাকা জুড়ে সবুজায়ন করা হবে।

প্রকল্প বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট ব্যয়ের ২৭ ভাগই ব্যয় হবে জমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়নের পেছনে। ৫০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ৪৮২ কোটি টাকা এবং ভূমি উন্নয়নের জন্য ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১১ তলা ডে সার্জারি ভবন (দিনের মধ্যে সার্জারি শেষ হবে) কাম একাডেমিক ভবন, সাত তলা ইউটিলিটি কমপ্লেক্স এবং ১৪ তলা ডরমিটরি ভবন, ১২ তলা প্রশাসসিক ভবন, ১১ তলা একাডেমিক ভবন, সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ সড়ক, পুকুর খনন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং প্লান্ট নির্মাণ হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিশ্বমানের হাসপাতালসহ অন্যান্য ভবন হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন বলেন, “সবার প্রচেষ্টায় পর প্রকল্পের জটিলতা দূর হয়েছে। আমরা দ্রুত কাজ শুরুর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। অতীতের মতো সবার সহযোগিতা চাই।”