চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এক ফল বিক্রেতাকে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যার মামলায় স্ত্রীসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গত ১৪ জুলাই সোমবার চট্টগ্রামের অষ্টম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এইচ এম শফিকুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির সবাই এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মৃত জয়নাল আবেদীন সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায় ফল বিক্রি করতেন।
মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—জয়নালের স্ত্রী রিমা আক্তার, তার প্রেমিক শাহাদাত হোসেন কাইয়ুম ও শাহাদাত হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি। রায় ঘোষণার পর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চট্টগ্রাম জেলা আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবছার উদ্দিন হেলাল জানান, ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল রাতে নিজ বাড়িতে জয়নালকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরে তার দেহ থেকে নাড়িভুঁড়িসহ বিভিন্ন অংশ কেটে বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। পরদিন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
ঘটনার পর নিহতের ভাই মো. মহিউদ্দিন সীতাকুণ্ড থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে রিমা আক্তার ও কাইয়ুমের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি। তাদের পরিকল্পনায়ই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে তদন্তে উঠে আসে।
২০২১ সালের ১২ এপ্রিল পুলিশ রিমা আক্তার ও শাহাদাত হোসেনকে গ্রেফতার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এরপর একই বছরের ২৬ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সীতাকুণ্ড থানার তৎকালীন এসআই সাজিব হোসেন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০২৩ সালের ১১ মে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রফিকুল ইসলামের আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়। সব কিছু পর্যালোচনা করে আদালত তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবছার উদ্দিন বলেন, “জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী রিমা ও কাইয়ুমের অবৈধ সম্পর্কের জেরে তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। আমরা সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।”
এ রায়ের মাধ্যমে জয়নাল হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হলেও সমাজে এ ধরনের পারিবারিক কলহ ও পরকীয়ার ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে নতুন করে ভাবনার দরকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।