চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘ দুই মাস ধরে আটকে রাখা তিনটি কনটেইনারে পাওয়া গেছে মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ঘনচিনি। শিল্প কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ঘোষণা দিলেও আসলে এসব কনটেইনারে ছিল আমদানি নিষিদ্ধ ঘনচিনি-এমন প্রমাণ পেয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তিনটি কনটেইনারে মোট ৬০ হাজার ৪৮০ কেজি ঘনচিনি পাওয়া গেছে। নগরীর সিটি গেইট এলাকায় গোল্ডেন কনটেইনার ডিপোতে কনটেইনারগুলো রাখা ছিল। রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানো টেকনোলজি সেন্টার, খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কাস্টমস ল্যাবের প্রতিবেদনে ঘনচিনির উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার প্রতিষ্ঠান ‘এইচপি ইন্টারন্যাশনাল’ শিল্পের কাঁচামাল ‘সোডা অ্যাশ লাইট’আমদানির ঘোষণায় গত ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার তিনটি আনে। পরে খালাসের জন্য সেগুলো গোল্ডেন ডিপোতে নেওয়া হয়। তবে গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ করে কনটেইনারগুলো আটকে রাখে।

এরপর গত ১৬ সেপ্টেম্বর নমুনা সংগ্রহ করে তিনটি পৃথক ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। মঙ্গলবার প্রাপ্ত পরীক্ষার রিপোর্টে স্পষ্টভাবে ঘনচিনি হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর চালানটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপকমিশনার এইচ এম কবির।

তিনি জানান, কাস্টমস আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির দায়ে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘনচিনি বা সোডিয়াম সাইক্লামেট একটি কৃত্রিম মিষ্টি, যা সাধারণ চিনির তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ গুণ বেশি মিষ্টি। দামে কম হওয়ায় অনেক অসাধু ব্যবসায়ী এটি ব্যবহার করে মিষ্টি, আইসক্রিম, চকলেট, কনডেন্সড মিল্ক ও বিভিন্ন পানীয় তৈরি করে থাকেন। এই উপাদান শরীরে ক্যানসার, হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় ২০০৬ সালেই দেশে ঘনচিনির আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১-২৪ সালের আমদানি নীতি আদেশেও এটি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।