ইবরাহীম খলিল ও মোঃ আশরাফুল আলম সিদ্দিকী চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে : আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসনেই ন্যায় ইনসাফের প্রতীক দাঁড়িপাল্লাকেই এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা। এর পেছনে রয়েছে ঘটনা, ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীর নেতৃত্বের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং সমসাময়িক কর্মকা-কে সামনে রাখছেন বিবেচনায়। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা একটি ন্যায় ইনসাফের রাষ্ট্র গড়তে পছন্দ করছেন দাঁড়িপাল্লা প্রতীককে। দাঁড়িপাল্লাকে পছন্দের শীর্ষে রাখার জন্য অন্যান্য দলের প্রার্থীদের বিতর্কিত বক্তব্য এবং নেতিবাচক কর্মকা-কেও বিবেচনায় রাখছেন সাধারণ ভোটাররা। বিবেচনায় রয়েছে প্রার্থীর ব্যক্তিগত ও বংশীয় ইমেজ এবং দু:সময়ের ত্যাগ তিতীক্ষা। নতুন বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির জন্য তরুণ ও যুবকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেও আছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা। অন্যান্য দলের বিতর্কিত বক্তব্য ও কর্মকা-, নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং মারামারির কারণেও সাধারণ ভোটাররা জামায়াতের প্রার্থীরা দিকে ঝুঁকছেন।

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জেও চলছে নির্বাচন ও প্রার্থীর অবস্থানসহ নানা বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। চলার পথে, রাস্তায়, নানা আড্ডায় এবং চায়ের টেবিলে। আলোচনায় টানা হচ্ছে নিকট অতীতের ফ্যাসিস্ট আমলের ইতিহাস, সেই সময়ের প্রার্থীদের ত্যাগ-তিতীক্ষা এবং ৫ আগস্টের পর নেতাকর্মীদের ভূমিকার কথাও। নিজের পক্ষে ভোট টানতে প্রার্থীরাও নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। তারা সভা সমাবেশ ও গণসংযোগ থেকে শুরু করে নানা সামাজিক কর্মকা-ে অংশ নিচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে এখন প্রার্থীদের গণসংযোগ, প্রচার ও উঠান বৈঠকে সরব সময় কাটছে।

সীমান্তঘেঁষা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির ও দু’বারের শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ডক্টর মাওলানা কেরামত আলী। নানা কারণেই আগামি নির্বাচনে ভোটাররা এগিয়ে রাখছেন ড. কেরামত আলীকে। প্রথমত স্বৈরাচার তাড়ানোর আন্দোলনে ড. কেরামত আলীর ভূমিকা ছিল আপসহীন। সততার পরীক্ষাতেও তিনি অগ্রগামী। বিশেষ করে দুবারের উপজেলার চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে কোনরকম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ফলে তার ইমেজ ভোটারদের দৃষ্টি কেড়েছে। কারণ একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে তার মতো যোগ্য মানুষ প্রয়োজন বলে মনে করেন ভোটার। জুলাই আন্দোলনের পর নতুন বাংলাদেশ ও এলাকার সুষম উন্নয়নের প্রয়োজনেই তাকে বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিবগঞ্জের ভোটাররা। এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিদের দলীয় কোন্দলসহ বিতর্কিত নানা কর্মকা-ের কারণে সাধারণ ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বিশেষ করে নতুন ও তরুণ ভোটাররা সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিতে চান। এজন্য জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের এগিয়ে রাখছেন বলে উঠে আসে নানা জরিপে।

জেলার নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী ডক্টর মিজানুর রহমান। তিনি সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সর্বস্তরের ভোটারের দিকে সমাদৃত। বিগত নির্বাচনে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন। ৫ আগস্টের তিনি গ্রহণযোগ্যতা অন্য দলের প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ। শিক্ষাবিদ হিসেবে ছাত্র, যুবসমাজ এবং তরুণ ভোটারদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক। সততা ও ন্যায় নিষ্ঠার কারণে এলাকার উন্নয়ন তার দ্বারাই হবে বলে মনে করেন অধিকাংশ মানুষ। আগামি নির্বাচনে অন্যদের তুলনায় বেশি যোগ্য বলেই উঠে আসে নানা জরিপে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনকে। এই আসনে জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির ও সাবেক শিবির সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা। এলাকা তার গ্রহণযোগ্যতা সবার কাছে। ছাত্র অবস্থায় জেলার সরকারী কলেজের ভিপি ছিলেন। তখন থেকেই তিনি এলাকার উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। সেইসাথে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করছেন। যুব সমাজের কাছে রয়েছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। বিগত স্বৈরাচার আমলে তিনি এবং তার পরিবার ব্যাপকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর নীতি নির্ধারক পর্যায়ে থাকার কারণে এই নির্বাচিত হলে এলাকায় বেশি উন্নয়ন হবে বলে ধারণা ভোটারদের। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্কিত এক মন্তব্যে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হচ্ছেন। একইকারণে সংখ্যালঘু ভোটাররা জামায়াতের প্রার্থীর দিকে ঝুকে পড়েছেন। এছাড়াও বিগত আন্দোলনে বির্তকিত ভূমিকা ও দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ করার কারণে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে এড়িয়ে চলছেন। এমনকি তার মনোনয়ন বাতিলের দাবি তুলেছেন। ফলে এলাকার সর্বস্তরের ভোটার দাঁড়িপাল্লা প্রতীককেই বেছে নিবেন বলে সচেতন মহল মনে করেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনেই প্রার্থীদের দক্ষতা যোগ্যতা এবং অবস্থানগত কারণে আগামি নির্বাচনে ভোটারদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন। এমনকি দলীয় কোন্দল কিংবা দ্বন্দ্ব না থাকার কারণে নির্বাচনী প্রচার প্রচরণা ও গণসংযোগেও তারা অন্যদের চেয়ে বেশি সক্রিয়। ফলে নির্বাচনী মাঠের সার্বিক অবস্থানে এবং এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ভোটাররা পছন্দের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লাকেই এগিয়ে রাখছেন আলোচনায়।