এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে লক্ষ্যমাত্রানুসারে পাটের বপন শুরু হয়। খুলনাঞ্চলে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ-১ মওসুমে পাটের বপন শেষে এখন সঠিক পরিচর্চা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগসহ নিবিড় পরিচর্চার চলমান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি হতে শুরু করে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কর্তন করা সম্ভব হবে এবং গৃহিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই অঞ্চল সক্ষম হবে, যা পাট উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, খুলনাঞ্চলে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ-১ মওসুমে পাটের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল। ওই লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে চলতি বছরে খুলনাঞ্চলের ৪ জেলায় (দেশী, তোষা ও মেস্তা জাতের পাট) খুলনা জেলায় ১ হাজার ৪৪৭ হেক্টর, বাগেরহাট জেলায় ১ হাজার ৯৬০ হেক্টর, সাতক্ষীরা জেলায় ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর ও নড়াইল জেলায় ২৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোমবার (১৯মে) সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সর্বশেষ তথ্যনুসারে পাটের আবাদের অগ্রগতি হয়েছে খুলনা জেলায় ১ হাজার ১৮৭ হেক্টর, বাগেরহাট জেলায় ১ হাজার ৯০৬ হেক্টর, সাতক্ষীরা জেলায় ১১ হাজার ৪৮৭ হেক্টর ও নড়াইল জেলায় ২৩ হাজার ৪৯৮ হেক্টর চাষাবাদ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ-১ মওসুমে খুলনাঞ্চলে পাটের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সর্বমোট অগ্রগতি হয়েছে ৩৮ হাজার ৭৮ হেক্টর, শতকরার হার ৯৫.৫%।

উল্লেখ্য, গত ২০২৪-২০২৫ খরিপ-১ মওসুমে সংশ্লিষ্টরা পাটের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৩৮ হাজার ৩৮৬ হেক্টর, অর্জিত হয়ে ছিল ৩৯,৩৪৪ হেক্টর। চলতি খরিপ-১ মওসুমে খুলনাঞ্চলে গত বছরের তুলনায় আরো ১ হাজার ৪৭১ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যামাত্রা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দিঘলিয়া উপজেলার গাজিরহাট ইউনিয়নের কৃষক শাহবুদ্দিন জানান, এ বছর ৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ সম্পন্ন করেছি। পাটের বপন শেষে এখন সঠিক পরিচর্চা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগসহ নিবিড় পরিচর্চা অব্যহত রেখেছি। বৃষ্টির পানির বিকল্প হিসাবে সেচের ক্ষেতে পানি দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস হতে সার্বিক বিষয়ে সহয়তা করে থাকেন।

খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কিশোর আহম্মেদ জানান, দিঘলিয়া উপজেলায় পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ-১ মওসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হেক্টর জমি। ওই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উপজেলায় (তোষা জাতের) পাটের আবাদের অগ্রগতি হয়েছে ৪৫ হেক্টর। ইতোমধ্যে পাটের বপন শেষে এখন সঠিক পরিচর্চা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগসহ নিবিড় পরিচর্চার চলমান রয়েছে। পাট উৎপাদনে উপজেলার কৃষিদের সার্বিক বিষয়ে সহয়তা করা অত্র উপজেলা কৃষি অফিস হতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ-১ মওসুমে পাট আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। খুলনাঞ্চলে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯৮৫৭ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ইতোমধ্যে এই অঞ্চলে আবাদের অগ্রগতি হয়েছে ৩৮০৭৮ হেক্টর, যার হার ৯৫.৫%। চলতি মওসুমে খুলনাঞ্চলে গত বছরের তুলনায় আরো ১ হাজার ৪৭১ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আশাকরি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গৃহিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই অঞ্চল সক্ষম হবে, যা পাট উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।