নরসিংদী সংবাদদাতা : এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রায়পুরা উপজেলার সায়েদাবাদ গ্রামে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় গুলীবিদ্ধ হয়ে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পাঁচজন গুলীবিদ্ধসহ আরো ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বাড়িঘরে গুলীবর্ষণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার ভোর পাঁটটা থেকে উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়েদাবাদ গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠে নেমেছেন সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা।
নিহত মহিলার নাম মোমেনা বেগম (৪৫)। তিনি রায়পুরার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়েদাবাদ গ্রামের আক্তার মিয়ার স্ত্রী বলে পরিচয় পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া গুলীবিদ্ধ হয়ে আহত পাঁচজন হলেন নাজিমুদ্দিন (৪৫), সিয়াম মিয়া (১৬), মো. রানা (২০), মো. মাহিন (২০) ও তাজুল ইসলাম (২০)। অন্য আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রায়পুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রবীর কুমার ঘোষ বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হানিফ মিয়া ও এরশাদ পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। গুলীবিদ্ধ হয়ে একজন নারী নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।
সরজমিনে এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়েদাবাদ বাজারের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বালুরচর ও সায়েদাবাদ গ্রামের লোকজনের মধ্যে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত বিরোধ চলে আসছিল। ওই বাজারের নিয়ন্ত্রণ সায়েদাবাদের হানিফ মিয়া পক্ষের লোকজনের হাতে। অন্যদিকে বালুরচরের লোকজন এরশাদ মিয়ার নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে সায়েদাবাদ বাজারে নিয়মিত যাতায়াত করতে চান। কিন্তু হানিফের লোকজন কোনোভাবেই তা হতে দিতে চান না। এ নিয়েই দুই গ্রামের লোকজন কিছুদিন পরপরই আগ্নেয়াস্ত্র, টেঁটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
বালুরচর গ্রামের বিভিন্ন বয়সের মানুষ আগ্নেয়াস্ত্র, টেঁটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এরশাদ মিয়ার নেতৃত্বে সকাল আটটা পর্যন্ত সায়েদাবাদ বাজারে হামলা চালান। এ সময় গুলীবিদ্ধ হয়ে নারী, শিশুসহ প্রতিপক্ষের অনেক মানুষ আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মোমেনা বেগম নামের ওই নারীর মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মোমেনার মৃত্যুর ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত হানিফ মিয়ার পক্ষের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র, টেঁটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বালুরচর গ্রামে গিয়ে পাল্টা হামলা চালান। এর আগেই গ্রামের লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যান। এ সময় তাঁদের বাড়িঘরে গুলীবর্ষণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবে কয়টি বাড়িঘরে গুলীবর্ষণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এরই মধ্যে সেনাবাহিনী ও রায়পুরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরিদা গুলশানারা কবির বলেন, ‘বুকে ও হাতে গুলীবিদ্ধ ওই নারীকে মৃত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আনা হয়েছিল। লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া গুলীবিদ্ধ পাঁচজনকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি।’