আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১০৯ কোটির বেশি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন।
দুদকের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পালাতে গিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তে আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে তাকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। দুদকের দায়েরকৃত মামলার নথিতে বলা হয়, ফজলে করিমের নামে ২৪ কোটি ৮ লাখ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বেশি এবং অস্থাবর সম্পদ প্রায় ১২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এসব সম্পদের বিপরীতে তার কোনো দায়-দেনার তথ্য পাওয়া যায়নি। অথচ তার আয়কর নথিতে বৈধ আয়ের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ফলে প্রায় ৬ কোটি টাকার সম্পদের উৎস অজ্ঞাত, যা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া, দুদকের অনুসন্ধানে তার ১২টি ব্যাংক হিসাবে ১০৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব হিসাবে জমা হয়েছে ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, উত্তোলন হয়েছে প্রায় ৫৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। দুদকের দাবি, দুর্নীতি ও ঘুষের টাকাগুলো বৈধ উৎস গোপনের উদ্দেশে বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করে মানি লন্ডারিং করা হয়েছে।
মামলায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সংসদ নির্বাচন করেন। যদিও সেবার পরাজিত হন, পরবর্তীতে ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে রাউজানবাসীর মধ্যে আতঙ্ক, গুম, খুন, দখল, দলীয় ও বিরোধী মতাবলম্বীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে।