ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দেশে চলছে দীর্ঘ ছুটির আমেজ। তবে এই ছুটির ফাঁদে পড়ে মওসুমের সবচেয়ে বড় উৎপাদন আম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এদিকে আমের বাজার জমজমাট থাকলেও ক্রেতা কম। ঈদের লম্বা ছুটিতে গাছ থেকে আম নামানো কমিয়ে দিয়েছেন চাষিরা। যারা নামিয়েছেন তারাও প্রত্যাশানুযায়ী দাম না পেয়ে হতাশ।
খবর নিয়ে জানা যায়, ঈদের টানা ছুটির কারণে দ্রুত পচনশীল ফল এই আম নিয়ে বিপাকে পড়েন রাজশাহী অঞ্চলের আমচাষি, বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা। এবার আমের ফলনও ভালো হয়েছে। গাছ থেকে আম নামানোর সময়ও তুঙ্গে। তবে ছুটির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো যাচ্ছে না আম। বন্ধ কুরিয়ার সার্ভিসও। তাই স্থানীয় বাজারেও পড়ে গেছে দাম। ছুটির কয়েকদিন আম না পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম অন্য এলাকার তুলনায় কিছুটা দেরিতে পাকে। সাধারণত মে মাসের শেষ সপ্তাহে গোপালভোগ জাতের আম দিয়ে শুরু হয় বেচাকেনা। এর পর জুনের প্রথম সপ্তাহে ক্ষীরসাপাত, দ্বিতীয় সপ্তাহে ল্যাংড়া আম আসে বাজারে। অপরদিকে রাজশাহীর চাষিরা জানান, আম পেকে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা আম নামিয়ে বাজারে এনেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, পরিবারের জরুরি টাকার প্রয়োজনে কিছু আম এনেছেন বিক্রি করতে। তবে ঈদের ছুটিতে পাইকারি ক্রেতা না থাকায় দরপতন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা ছুটির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় আম পাঠানো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে স্থানীয় বাজারেও কমছে দাম। আমের বাজার কুরবানির ঈদের ব্যস্ততা আর দীর্ঘ ছুটির প্রভাবে দরপতন ঘটতে শুরু করেছে।
চাঁপাইয়ের ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি মণ আমের দাম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কমেছে। তারা জানান, আম পরিবহন ও বাজারজাতের অন্যতম ব্যবস্থা কুরিয়ার সার্ভিস। ঈদ উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ৯ জুন সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ। ৪ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যায় আমের বুকিং নেয়া। এতে থমকে গেছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো আমের বিশাল অনলাইন মার্কেটিং। চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাধারণত মে মাসের শেষে অথবা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে গাছে পাকা আম দেখতে পাওয়া যায়। গাছে পাকা আম দেখা দিলে পরিপক্ক এই আম বাজারে নামান চাষি ও ব্যবসায়ীরা। গত ১ জুন থেকে চাঁপাইয়ের বিখ্যাত কানসাট বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে আম বাজার জমে ওঠে। শুরুতে বাজারে উঠে গোপালভোগ আম। বাজার দর ১৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা। এদিন ক্ষীরশাপাত আমও আসে বাজারে। শুরুতেই ক্ষীরসাপাত আম প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছিল ২০০০ টাকার উপরে। দুদিন পর ৩ জুন বিক্রি হয় ২২০০ থেকে ২৮০০ টাকা মণ দরে। আর ল্যাংড়া আম বিক্রি হয় ১৪০০ থেকে ২৪০০ টাকা মণ। তবে কুরবানির ঈদমুখী ব্যস্ততা ও অফিস-আদালতের দীর্ঘ ছুটির প্রভাবে আমের দাম কমে যায়। ৮ জুন বাজারে ক্ষীরসাপাত আম ১৬০০ থেকে ২৪০০ টাকা মণ এবং ল্যাংড়া আম প্রতি মণ ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। একজন আমচাষি জানান, ক্ষীরসাপাত, গোপালভোগ, বৃন্দাবনী জাতের এখন ভরা মৌসুম। পুরো গাছ পাকা আমে পরিপূর্ণ। কিন্তু ঈদের ছুটির কারণে কুরিয়ার চালু না হওয়া পর্যন্ত আম পাড়া যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমির আম বাগানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পৌনে চার লাখ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা কৃষি বিভাগের।
এদিকে ঈদের লম্বা ছুটিতে আম নামানো কমেছে রাজশাহীর চাষিদের। যারা নামিয়েছেন তারাও প্রত্যাশানুযায়ী দাম না পেয়ে হতাশ। রোববার প্রতি মণ আমে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দরপতন হয়েছে। একজন আম ব্যবসায়ী বলেন, ঈদের দিন ও আগের দিন হাটে কোনো আম উঠেনি। পরদিন অল্প কিছু আম উঠেছিল। এর দাম ভালো যায়নি। আসলে আম তো আর ঈদের ছুটি মানে না। গাছে আম পাকলে রাখা যায় না, পাখি নষ্ট করে। আবার পচে যায়। তাই কিছু আম চাষিরা এনেছেন। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটা দীর্ঘমেয়াদি কোনো দরপতন নয়। ঈদের ছুটিতে সবাই নিজবাড়িতে ঈদ করছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাড়ি ফিরে গেছেন। যারা আম খাবেন সেই ভোক্তারাও শহর ছেড়ে গ্রামে। কুরিয়ার বন্ধ। তাই সাময়িক দাম কমেছে। আশা করা যাচ্ছে, দু’দিনের মধ্যেই দাম ঠিক হয়ে যাবে।