লালমনিরহাট সংবাদদাতা : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সংস্কারবিহীন এক তরফা নির্বাচন দেশের জনগণ মানবে না। সেই নির্বাচনে এনসিপি অংশ নেবে না। জুলাই আন্দোলন ভয় ভেঙে দিয়ে আমাদের নির্ভয়ে কথা বলতে শিখিয়েছে। আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে দাবি আদায় করতে হয়। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। শুধু মাত্র সরকার পরির্তনের জন্য জুলাই আন্দোলন হয়নি। একদলের পরিবর্তে আরেক দলের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার জন্য রাজপথে ছাত্র-জনতা রক্ত দেয়নি।

বুধবার ২ জুলাই বিকেলে লালমনিরহাটের মিশন মোড় চত্বরে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে লালমনিরহাটের ঐতিহাসিক এমটি হোসেন ইনস্টিটিউট মাঠ থেকে পদযাত্রা বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া মানুষের কথা শুনতে জুলাইজুড়ে দেশের সব জেলায় মাসব্যাপী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে লালমনিরহাটে পথসভা ও সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

সমাবেশে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই আন্দোলনে নতুন দেশ হয়েছে। কিন্তু গত এক বছরে আমরা কি পেলাম! এখন আমরা সেই হিসাব মেলাবো। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিচার এখনো হয়নি। যারা ছাত্র জনতার বুকে গুলী চালিয়েছে তাদের বিচার হয়নি। ফ্যাসিস্ট এর আমলে যেসব ব্যাবসায়ী আমলারা অবৈধভাবে অর্থের পাহাড় গড়েছে তাদের বিচার হয়নি। এখনো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে খুনের বিচার করতে হবে।

তিনি বলেন, পানির জন্য তিস্তার কৃষকরা ফসল ফলাতে পারে না। ভারত তিস্তার পানি ন্যায্য হিস্যা দেয় না। ভারত এক তরফা পানি প্রত্যাহার করে তিস্তাকে বানিয়েছে মরুভূমি। দেশের সীমান্তের মানুষ অরক্ষিত। আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করবো। আমরা সীমান্তের মানুষদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবো।

আমরা নতুন দেশ গঠনের জন্য রাজপথে নেমেছি।

তিনি আরও বলেন, গত ৫০ বছরে উত্তরবঙ্গের মানুষ উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার হয়েছে। শুধু সরকার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু লালমনিরহাটসহ উত্তরের মানুষের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হয়নি। আমার ওই বৈষম্য দূর করতে চাই। আমরা মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। এনসিপি’ সেই লক্ষেই কাজ করবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে দলটির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, উত্তঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার ও সহকারি মূখ্য সংগঠক রাসেল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, সকালে এনসিপি নেতারা কুড়িগ্রাম জেলায় পথসভা ও সমাবেশ করেছিলো।

সময় এসেছে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা : ৩ দফা দাবিতে এনসিপি’র কুড়িগ্রামের ঘোষপাড়াস্থ পথ সভায় বক্তব্যদানকালে এনসিপির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন ২৪’শের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদের রক্তের দাগ রেখে নির্বাচন হলে তা কতোটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে তা দেশবাসী জানে। সংস্কার, বিচার ও সংবিধান সংশোধন বা নতুন সংবিধান এবং জুলাই ঘোষণাপত্র ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। এখনো অনেক জুলাই যোদ্ধা হাসপাতালে আছে। শহীদ পরিবারগুলোর এখনো কান্না থামেনি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা, কুড়িগ্রামের স্থায়ী উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি নদী ভাঙ্গনরোধসহ অনেকগুলো কাজ করতেই হবে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য।

মূখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ পুলিশকে হুশিয়ারী দিয়ে বলেন আপনারা কোনো দলের হয়ে লেজুড় বৃত্তি করবেননা। অতিত থেকে শিক্ষা নিয়ে জনবান্ধব হয়ে যান। আপনারা সকলের জন্য কাজ করুন।

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথে- কুড়িগ্রামে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক জুলাই পদযাত্রা ও পথসভায় নেতৃত্ব দেন কুড়িগ্রামের গর্ব, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক কুড়িগ্রামের কৃতি সন্তান কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাংসদ পদপ্রার্থী ড. আতিক মুজাহিদ। পদযাত্রায় ট্রাকের অস্থায়ী মঞ্চে আর-ও বক্তব্য রাখেন এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব মো. আখতার হোসেন, যুগ্ম সদস্য সচিব ডা: তাসনিম জারা, মূখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম এবং ডক্টর আতিক মুজাহিদ সহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

এনসিপি’র কেন্দ্রীয় লিডারগণের উত্তরাঞ্চল সফরের অংশ হিসেবে অংশগ্রহণে উজ্জীবিত হয়ে প্রখর রোদ উপেক্ষা করে সংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ সমর্থকগণ কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শোনেন এবং স্লোগানে স্লোগানে মূখোরিত করেন পথসভা স্থল।

ড. আতিক মোজাহিদকে কুড়িগ্রাম-২ আসনের এমপি প্রার্থী ঘোষণা করে এনসিপি’র কেন্দ্রীয় লিডার নাহিদ ইসলাম আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি কেবল একটি মিছিল বা আনুষ্ঠানিক আয়োজন নয়, বরং বৈষম্যবিরোধী সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতীকী প্রতিধ্বনি। তাদের ভাষায়, “জুলাই মানে শুধু অতীত স্মরণ নয়—জুলাই মানে নতুন ভবিষ্যতের প্রত্যয়।”

জনগণের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে, বিশেষ করে তরুণ সমাজ এই কর্মসূচিকে ঘিরে বিপুল আগ্রহ প্রকাশ করছে।

পথসভা সফল করতে আয়োজকরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাংবাদিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, সারাদেশে জুলাই মাসজুড়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রা ও পথসভা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ০১ জুলাই শহীদ আবু সাইদের কবর জেয়ারত থেকে কর্মসূচীর সূচনা করে কুড়িগ্রামের এই পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে যা একটি বৈষম্যহীন, সমতা-ভিত্তিক ভবিষ্যতের দাবি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না।

কুড়িগ্রামের পদযাত্রা ও পথসভা শেষে ফুলবাড়ী হয়ে লালমনিরহাট জেলা সফর করার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের।