DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

গ্রাম-গঞ্জ-শহর

লবণ পানির আগ্রাসনে কয়রার নারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে

আবহাওয়ার সাথে খাপ না খাওয়ায় উপকুলীয় অঞ্চলে নারীরা রয়েছে প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুকিতে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এই অঞ্চলের নারীদের স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষায় কার্যকরি ব্যাবস্থা গ্রহন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যে শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয়, দুর্যোগ,

খুলনা ব্যুরো
Printed Edition
fdgdf

আবহাওয়ার সাথে খাপ না খাওয়ায় উপকুলীয় অঞ্চলে নারীরা রয়েছে প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুকিতে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এই অঞ্চলের নারীদের স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষায় কার্যকরি ব্যাবস্থা গ্রহন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যে শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয়, দুর্যোগ, আবহাওয়া পরিবর্তনের মতো সব সময় ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান, এমন নয়। নারীর ওপর রয়েছে এর বহুমুখী প্রভাব। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি নারীর আর্থিক, সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, যা পুরো সমাজকে প্রভাবিত করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পুরুষের চেয়ে নারীর স্বাস্থ্যগত সমস্যা বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে উপকূলীয় নদী তীরবর্তী অঞ্চলের নারীরা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন। উপকূলীয় এলাকার নারীরা লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে জরায়ুর মতো জায়গায় জটিল রোগে ভুগছেন। কয়রা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে একাধিক শ্রমজীবী নারীর সাথে কথা বললে এমন চিত্র বেরিয়ে এসছে।

তারা বলেন, লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে নারীর গর্ভপাতের হার বেড়েছে। খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলার নারীরা অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে নারীর জরায়ু রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভকালীন খিঁচুনি, অপরিকল্পিত গর্ভপাত, এমনকি অপরিণত শিশু জন্মের হার বেড়েছে। এ ছাড়া এ অঞ্চলের নারীরা দৈনন্দিন কাজে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে লিকোরিয়া অর্থাৎ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগসহ চর্মরোগে ভুগছেন।

কয়রা উপজেলা জলবায়ু পরিষদের সদস্য নিরাপদ মুন্ডা বলেন,‘উপকূলীয় এলাকায় জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রায় ৫০ শতাংশ নারীর বেশির ভাগ সময় নদীতে মাছ ধরা কাজ সহ ঘেরের পানিতে কাটাতে হয়। তাদের উপার্জনের একমাত্র পথ নদীতে জালটানা ও মাছের ঘের, যেখানে লবণ পানির পরিমাণ বেশি। দিনের বেশির ভাগ সময় লবণাক্ত পানিতে অতিবাহিত করার জন্য তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে। এ ছাড়া সচ্ছলতা না থাকায় তারা নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে পারেন না। ফলে তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়ছে, বাড়ছে মানসিক সমস্যাও। তিনি আরও বলেন, ‘নারীর আর্থিক সচ্ছলতার জন্য বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে ধীরে ধীরে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব। তা ছাড়া আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় তারা শিক্ষার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়ছেন।

কয়রা উপজেলা শিশু সুরক্ষা কোয়ালিশনের সভাপতি কপোতাক্ষ কলেজের সাবেক অধ্যাপক আ, ব, আব্দুল মালেক বলেন, এই অঞ্চলের আবহাওয়ার গড় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়ায় মানুষ নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। বিশেষ করে কিশোরী ও নারী, যাদের বয়স ১২-৪৫ বছরের মধ্যে, তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি দেখা যায়। ঋতুস্রাবের সময় থেকে শুরু করে মেনোপোজের সময় দেখা দেয় স্বাস্থ্যজনিত নানা সমস্যা। যেমন-পুষ্টিহীনতা, রক্তস্বল্পতা, অনিরাপদ প্রসব, অপরিণত শিশু প্রসব, খিঁচুনি ও অনিয়মিত ঋতুস্রাব।

উত্তর বেদকাশি বতুল বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি উম্মেহানী আক্তার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকুলীয় অঞ্চলের নারীর মধ্যে দেখা দেয় পুষ্টিহীনতা। প্রায় সময় নারীর মধ্যে অনিয়মিত ঋতু¯্রাব, জরায়ুতে সিস্ট, অসময়ে মেনোপোজসহ প্রজনন স্বাস্থ্যের নানা জটিলতা। কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারী ও কিশোরীর মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো গেলে এ সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুজিত কুমার বৈদ্য বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে, এতে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে। হরমোনের তারতম্যের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের শিকার হচ্ছে নারী ও কিশোরীরা।

খুলনায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত : উদ্বোধন অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা, নারী উদ্যোক্তা মেলা, আলোচনা সভা, কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ-সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ (শনিবার) খুলনায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার।