খুলনা মহানগরীতে প্রবেশকালেই চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। শহরের তিনটি প্রবেশদ্বারের প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। মেরামত নিয়ে কেডিএ, কেসিসি ও এলজিইডি’র সমন্বয়হীনতার কারণে অকার্যকর হয়ে পড়েছে এসব সড়ক। অতি দুর্ঘটনার ঝুঁকি প্রবণ হয়ে পড়েছে এই সড়কগুলো। প্রবেশদ্বারের সড়কগুলোর বেহাল দশায় প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। ঝুঁকি নিয়ে হেলে-দুলে চলতে হয় ইজিবাইক, বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কারসহ সব ধরনের যানবাহনকে। পাশাপাশি বিকল্প সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। এসব সড়ক সংস্কার কিংবা পুনঃনির্মাণের জন্য খুলনার বেশ কয়েকটি সংগঠন দফায় দফায় আন্দোলন ও মানববন্ধন করলেও তার সুফল মেলেনি। এ জন্য খুলনার বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন নাগরিক নেতারা। দ্রুত এসব সড়কের সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের। সূত্র মতে, খুলনা মহানগরীর প্রবেশ করার জন্য ৩টি গুরুত্বপূর্ণ দ্বার রয়েছে। এরমধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোস্তফার মোড় থেকে রায়েরমহল পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়ক এবং খানজাহান আলী সেতু থেকে রূপসা ট্রাফিক মোড় পর্যন্ত শিপইয়ার্ড সড়ক, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ কিলোমিটার এবং কেসিসি ও কেডিএ’র নিয়ন্ত্রণে থাকা সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক, যার দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। এসব সড়কের পাশ রয়েছে প্রায় ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২৭টির মত চালকল, ২৪৩টির মত কাঠগোলা, ছোটবড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ মানুষের বসবাস। এই সড়কগুলোর হতশ্রী দশার কারণে শুধুমাত্র খুলনায় আগত যান ও পণ্যবাহী পরিবহন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হচ্ছেন শিশু ও নারীসহ সাধারণ এলাকাবাসী। ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল, যশোর, মাগুড়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, ডুমুরিয়া, বাগেরহাট, মোংলাসহ দেশের প্রায় ১৮টি জেলা থেকে সড়ক পথে আসা যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনকে খুলনা মহানগরীতে প্রবেশের সময় সোনাডাঙ্গা বাইপাস সড়ক, রূপসা সেতুর সংযোগ সড়ক বা মোস্তর মোড় থেকে রায়েরমহল যেকোন একটি সড়ক ব্যবহার করে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে প্রবেশ করতে হয়। তিনটি প্রবেশ পথই দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ২০১০ সালে নগরের রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে শিপইয়ার্ডের সামনে দিয়ে খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) পর্যন্ত চলে যাওয়া প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। ২০১৩ সালে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন মেলে। দফায় দফায় মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়েও প্রকল্পটি আলোরমুখ দেখেনি।

শহরকে সম্প্রসারিত করার জন্য সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন সংযোগ সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। ২০১১ সালে ২ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার লম্বা সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু করে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেড। দুই বছরেই শেষ হয় কাজ। এর কিছুদিনের মধ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। কয়েকবার মেরামত করেও তা টেকেনি।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে ‘ঘুর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় মোস্তর মোড় থেকে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরুর বছর খানেক গড়িমসির পর সময় বাড়িয়ে ঠিকাদার কার্পেটিংয়ের কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু কাজ শেষ না হতেই অনেক জায়গায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে যায়।