বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএফআরআই) ফের স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও প্রতিষ্ঠানটি এখনো আগের সরকারের অনুসারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এ কে এম শওকত মজুমদারকে বিএফআরআই’র পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর ৩০ নভেম্বর তিনি প্রশাসনিক বিভাগে বিতর্কিত আনিসুর রহমানকে দায়িত্ব দেন, যিনি একসময় শেখ হাসিনার শাসনামলে বিতর্কিত বাঁশ গবেষণা প্রকল্পের উপপরিচালক ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে আওয়ামীপন্থি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা আনিসুর রহমান, তৎকালীন প্রভাবশালী পিএসসি সদস্য শরীফুল এনামুল কবিরের সুপারিশে নিয়োগ পান বলে দাবি করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বীজবাগান ও সিলভিকালচার বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয় ফাইভ স্টার গ্রুপের সদস্য আরিফুর রহমানকে।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান প্রশাসন প্রতিষ্ঠানটিকে ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করছে। জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, বরং ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টদের অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

হিসাব শাখায় ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার সুজন চন্দ্র সরকারকে বহাল রাখা হয়েছে, কিন্তু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় সাদেক শাহ সালাউদ্দীনকে একাধিকবার আবেদন করেও সুযোগ দেওয়া হয়নি, বরং হয়রানির শিকার হয়েছেন।

১০ মার্চ ২০২৫ তারিখে নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিযুক্ত করা হয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, বরিশালের আওয়ামী লীগ নেতার সন্তান কাজী আসাদুজ্জামানকে। জাতীয়তাবাদী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এর প্রতিবাদ করলে, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান ও পরিচালক শওকত মজুমদার তাদের কথা উপেক্ষা করেন।

অভিযোগ রয়েছে, শতবর্ষী বিরল উদ্ভিদ নিধনসহ পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করা হচ্ছে। যানবাহন শাখায় ইস্কনপন্থী প্রবীর কুমার বিশ্বাস ও প্রশাসনিক সংস্থাপন শাখায় এয়াকুব আলীর মতো ফ্যাসিস্ট আমলের ঘনিষ্ঠদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সমর্থক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। পাম্প ড্রাইভার ফারুক আহমেদ নিজ পদে ফিরে যেতে আবেদন করলেও তার আবেদন উপেক্ষিত হয়েছে।

সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা নাদিম সরোয়ারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। আর বিএনপি আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত গবেষণা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ও আকতার হোসেনকে দীর্ঘ পাঁচ বছরেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।

এই অবস্থা চলতে থাকলে বিএফআরআই থেকে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যত বিতাড়িত করা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বিএফআরআই’র পরিচালক একেএম শওকত মজুমদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কল না ধরায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।