বছরের প্রধান ইলিশ মৌসুম প্রায় শেষের পথে। অথচ এবার গরিব ও মধ্যবিত্তদের পাতে ইলিশ তেমন দেখা মেলেনি। শুরু থেকেই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হওয়ায় বড়-মাঝারি ইলিশ এখন বাজার থেকেই প্রায় উধাও হয়ে গেছে। অন্যদিকে, গত কয়েক সপ্তাহের আগুনঝরা সবজির দামে সামান্য কমতির ইঙ্গিত মিলেছে, যদিও খুচরা বিক্রেতারা বলছেনÍএ স্বস্তি কতদিন স্থায়ী হবে তা অনিশ্চিত। এদিকে মুরগির দাম আবারও বেড়েছে; তবে মাছ, গরু-ছাগলের মাংস, চাল ও অন্যান্য মুদি পণ্যের দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি ও ২ নম্বর গেইট এলাকার কর্ণফুলী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় আকারের ইলিশ একেবারেই অনুপস্থিত। সাধারণত বঙ্গোপসাগর থেকে বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়ে; এর মধ্যে আষাঢ় থেকে আশ্বিন সময়টিকে জেলেরা ‘ভরা মৌসুম’ বলে থাকেন। এখন মৌসুম প্রায় শেষ হলেও দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বৈশাখের শুরু থেকে ৫৮ দিন সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ১১ জুন, এরপর ১২ জুন থেকে আবার সাগরে নামেন জেলেরা। আগামী অক্টোবর মাসে শুরু হবে ইলিশের প্রজনন মৌসুম, তখন আবারও মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
কাজীর দেউড়ি ছাড়াও রিয়াজউদ্দিন বাজার, বকশিরহাট, সাব এরিয়া বাজারসহ কয়েকটি বাজারে কিছু বড় ইলিশ দেখা গেলেও অন্যান্য বাজারে বড় ইলিশ একেবারেই নেই। ছোট ইলিশ (প্রতি কেজিতে ৬-৭টি) বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা দরে, আর মাঝারি আকারের (৪টি কেজিতে) ৮০০ টাকায়। বড় ইলিশের দাম কাজীর দেউড়িতে কেজিপ্রতি ২২০০-২৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা আবদুর রাহিম বলেন, ‘এবার ইলিশ খাওয়া হয়নি বললেই চলে। দুই হাজার-আড়াই হাজার টাকা দিয়ে ইলিশ কেনার সামর্থ্য নেই। একবার ৭০০-৮০০ টাকায় ছোট ইলিশ কিনেছিলাম, কিন্তু স্বাদ-ঘ্রাণ কোনোটাই ছিল না।’
এদিকে বাজারে অন্যান্য মাছের মধ্যে লইট্যা ও ফাইস্যা ১৫০-২০০, পোয়া ২৫০-৩০০, কোরাল ৬০০-৯০০, রুপচান্দা ৩৫০-৭০০, চিংড়ি (বাগদা-গলদা) ৬৫০-১২০০, রুই ও কাতলা ৩৫০-৪৫০, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সোনালি মুরগির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৩৫০ টাকায় পৌঁছেছে। ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৭৫, দেশি মোরগ ৬৫০, হাঁস ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭৫০-৯৫০, ছাগলের মাংস ১২০০-১২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেগুন, কাঁকরোল, শিমসহ কিছু সবজির দাম সামান্য কমেছে। বেগুন ৮০-৯০, কাঁকরোল-পটল ৭০-৮০, ঝিঙা ৬০-৭০, বরবটি ৬০-৭০, টমেটো ১২০, শিম ১৬০-১৭০ টাকায় নেমেছে। আলু ২৫-৩০, কাঁচামরিচ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজ ৮০-৯০, রসুন ৭৫-১৫০, আদা ১২০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অপরিবর্তিতÍমিনিকেট চাল ৭৮-৮৫, নাজিরশাইল চাল ৮৫-৯০, স্বর্ণা চাল ৫৫-৬০, বাসমতী চাল ৯৫-১২০, চিনিগুঁড়া চাল ১৩০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য মুদি পণ্যের মধ্যে আটা ৪৮-৫০, ময়দা ৫৫, মসুর ডাল ১০০-১৬০, চিনি ১০৫-১২০, মুগডাল ১৩০-১৪০, সয়াবিন তেল ১৮০-১৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সব মিলিয়ে মৌসুম শেষ হলেও এবার ইলিশ সাধারণ মানুষের নাগালে না আসায় হতাশ ক্রেতারা। অন্যদিকে, সবজির দামে সামান্য স্বস্তি এলেও বাজার পরিস্থিতি যে এখনও অস্থির, তা বলছেন খোদ বিক্রেতারাই।